খাদ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা রাজ্যের প্রায় দু’কোটি মানুষের কাছে সরকার নির্ধারিত চাল-গম পৌঁছাচ্ছে না। কবে পৌঁছবে তারও নির্দিষ্ট তথ্য নেই কারও কাছে। ফলে পুজোর মুখে গ্রাহক-বিক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কা করছেন রেশন ডিলারেরা। গণ বিক্ষোভের ভয়ে বর্ধমান জেলায় সতেরোশো রেশন দোকান বন্ধও করে রেখেছেন তারা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্যের সম্পাদক খাইরুল আলম বলেন, ‘‘রাজ্যের খাদ্য কমিশনারকে পরিস্থিতির কথা জানালে তিনি উপভোক্তাদের হাতে ‘ডিউ স্লিপ’ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ভাবে উৎসবের মরসুমে আমাদের গণবিক্ষোভের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’’ যদিও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪১০টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সে জন্যই ডিলারদের মধ্যে একটা দুষ্টু চক্র কাজ করছে।’’
ওই সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে খাদ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা মানুষদের ২ টাকা কেজি দরে চাল ও ৩ টাকা কেজিতে গম সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মাথা পিছু চাল-গমের পরিমাণ আচমকা কমিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় রাজ্য জুড়েই। খাইরুলবাবু জানান, মাথা পিছু চাল ও গম সরবরাহ করা হত যথাক্রমে ১ কেজি ও দেড় কেজি। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে তা দাঁড়ায় ৬০০ ও ৯০০ গ্রাম। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সপ্তাহে মানুষকে বোঝানো গিয়েছিল। কিন্তু পরের সপ্তাহে মানুষ কোনও কথা না শুনে হামলা চালায়। বেশ কয়েকটি রেশন দোকানের মালিককে মারধরও করে।”
বর্ধমান জেলার ডিলারেরাও জানান, প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে রেশন-বিক্ষোভের ফলে আসানসোলে ১৬টি, বর্ধমান শহরে দু’টি ও কাটোয়াতে ১টি দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে এ সপ্তাহে জেলার ১৯৩১টি রেশন দোকানের মধ্যে ১৭৬২টি বন্ধ রেখেছে সংগঠন। জেলা সম্পাদক পরেশ হাজরা বলেন, “খাদ্য সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা মানুষজনকে চাল-গম কম দিয়েছিল সরকার। তা সরবরাহ করতে গিয়ে আমাদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। রেশন-বিক্ষোভের পর আমাদের শিক্ষা হয়েছে। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে সংগঠনগত ভাবে রেশন দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।” তাঁদের দাবি, সরকারের নির্ধারিত দ্রব্য তুলতে তাঁরা বাধ্য। কিন্তু সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিক খাদ্য-সুরক্ষার আওতার বাইরে থাকা উপভোক্তারা মাথা পিছু কত করে চাল-গম পাবেন। তাহলে আর কোনও বিভ্রান্তি দেখা দেবে না। সে ক্ষেত্রে রেশন দোকান খুলে দ্রব্য সরবরাহ করতে ডিলারদের কোনও অসুবিধা হবে না। রেশন ডিলারদের আরও অভিযোগ, পুজোর মরসুমে যে তেল ও ময়দা সরবরাহ করা হচ্ছে গুণমানের তুলনায় তার দাম বেশি।
রাজ্যের এম আর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকও মেনে নেন, ‘‘রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় এই সমস্যা হয়েছে। আমরা সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি।’’ বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতিতেও আলোচনা হয়। জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইলের আশা, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’ যদিও খাইরুলবাবুর দাবি, ‘‘খাদ্য কমিশনের পরামর্শ ডিলারেরা উপভোক্তাদের ‘ডিউ স্লিপ’ দেবেন। সেটা মহকুমা খাদ্য আধিকারিককে জানাবেন তাঁরা। তিনি জেলায় জানাবেন। সেখান থেকে রাজ্য স্তরে রিপোর্ট গেলে তাঁরা বিবেচনা করে দেখবেন। এটা কী পরামর্শ না মার খাওয়ার রাস্তা?’’
খাদ্য কমিশনার অনিল ভর্মা অবশ্য প্রশ্ন শুনেই ‘ঠিক মতো শোনা যাচ্ছে না’ বলে ফোন কেটে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy