E-Paper

ঘটনাস্থল ফের সেই শক্তিগড়, প্রভাব ব্যবসায়

শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ের আমড়ায় কয়লা কারবারি রাজু ঝা-কে খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে এমন বর্ণনাই পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:২৫
শক্তিগড়ের সেই এলাকায় যেখানে গুলি করা হয় রাজু ঝা’কে।

শক্তিগড়ের সেই এলাকায় যেখানে গুলি করা হয় রাজু ঝা’কে। ছবি পিটিআই।

সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট নাগাদ সাদা রঙের এসইউভি এসে দাঁড়িয়েছিল ল্যাংচার দোকানের সামনে। অপেক্ষাকৃত অন্ধকার ছিল সে জায়গা। মিনিট দশেক পরে নীল রঙের একটি গাড়ি এসইউভি-র পাশে এসে দাঁড়ায়। দ্রুত সেটি থেকে নেমে আসে চার জন। ঘিরে ফেলে এসইউভি-কে। প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। দু’জন চালকের আসনের দিকে চলে যায়। এক জন দু’হাতে গুলি চালায়। আর এক জন ভারী কিছু দিয়ে পিছনের জানলার কাচ ভাঙে। তার পরেই খুব সামনে থেকে পরপর গুলি চালিয়ে বেরিয়ে যায় আততায়ীরা।

শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিগড়ের আমড়ায় কয়লা কারবারি রাজু ঝা-কে খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে এমন বর্ণনাই পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের আরও দাবি, আততায়ী যুবকদের পরনে হলুদ ও কালো রঙের জামা ছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, “গাড়ি দাঁড়ানো থেকে বেরিয়ে যাওয়া, সব মিলিয়ে বড়জোর পাঁচ-সাত মিনিট সময় নিয়েছে আততায়ীরা।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে রাজু ও তাঁর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে ওই এসইউভি-তে করেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি শাখা অনাময় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন চালক নুর হোসেন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, রবিবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সদর) কল্যাণ সিংহরায়ের নেতৃত্বে ১২ জন সদস্যের ‘সিট’ গঠন করা হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় বেলগাছিয়া ফরেন্সিক বিভাগ থেকে একটি দল ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজুর শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন মিলেছে। দেহে মিলেছে চারটি গুলি।

কয়েক দিন আগেই আসানসোল থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে অনুব্রত মণ্ডলকে একটি দোকানে প্রাতরাশ করাতে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে সেখানে ‘বহিরাগত’ কয়েক জন দেখা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দোকান থেকে শনিবারের ঘটনাস্থল শ’দেড়েক মিটার দূরে। এই ঘটনায় আবার অনুব্রত-‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আব্দুল লতিফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ছ’লেন হওয়ার কাজ চলছে, তাতে এমনিতেই ক্রেতা তুলনায় কম হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। শনিবার রাতে খুনের ঘটনার পরেই জিনিসপত্র ফেলে রেখে হকারেরা পালিয়ে যান। দোকানে ঝাঁপ পড়ে যায়। রবিবার দিনভর পুলিশের আনাগোনায় ব্যবসা প্রায় অর্ধেক মার খেয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অনেকের দাবি। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “রবিবার বিকেলে প্রচুর পর্যটক এসে দোকানের সামনে দাঁড়ান। এ ছাড়া, এক-একটি দোকানের সামনে প্রায় ২০টি বাস দাঁড়ায়। রবিবার অর্ধেক যানবাহন দাঁড়ায়নি।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটি পুলিশ ঘিরে রেখে দিয়েছে। সেখান থেকে ১৫ মিটার দূরে একটি দোকানের সামনে রক্তের দাগ থাকায়, সে জায়গাও পুলিশ ঘিরে রেখেছে। ওই দুই জায়গা থেকে ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করেছে। পুলিশের দাবি, আততায়ীদের গুলিতে জখম হওয়ার পরে ওই দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন ব্রতীন। পুলিশ জায়গা ঘিরে দেওয়ায় ঝালমুড়ি, শশা ও ডাব বিক্রেতাদের ব্যবসা মার খেয়েছে বলে দাবি।

তাঁরা বলেন, “শনিবার রাতে তাড়াহুড়োয় দোকানের সামনে মুড়ির টিনের ডালা ফেলে চলে গিয়েছিলাম। এসে দেখছি জায়গা ঘিরে দিয়েছে। ফলে, ওই ডালা বার করা যায়নি। লোকসান হয়ে গেল। কত দিন ঝক্কি যাবে, কে জানে!” সন্ধ্যায় আততায়ীদের ব্যবহৃত গাড়ি এবং সাদা এসইউভি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ গৌরব পালচৌধুরী ও অরবিন্দ ভক্ত। পুলিশ জানায়, আততায়ীদের ব্যবহৃত গাড়ি থেকে ১৩টি কার্তুজ মিলেছে। তাঁরা বলেন, “কিছু নমুনা নেওয়া হয়েছে। আরও নেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raju Jha Shaktigarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy