প্রতীকী চিত্র।
বর্ষা পুরোদমে আসতে না আসতেই বিষধর সাপের উৎপাত শুরু হয়েছে কালনা মহকুমায়। শুক্রবার রাত থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোর-সহ তিন জনের। মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে সাপে কাটা আরও দু’জনের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেগঞ্জে সাপের ছোবলে মৃত্যু ঠেকাতে সোমবার থেকে প্রচার শুরু করা হবে। একই সঙ্গে সাপে কাটলে কী কী ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া দরকার, সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কিছু শিবিরও করা হবে।
শনিবার বিকালে বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির পাশে মাঠে খেলছিল কালনা ১ ব্লকের কাকুরিয়া এলাকার কিশোর বিজয় সব্বর। দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এই ছাত্র বৃষ্টি নামলে নিজেদের মাটির বাড়ির সামনে একটি ছাউনির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে দেওয়ালের ফাটা অংশ থেকে সাপ বেরিয়ে ছোবল মারে বিজয়কে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দৃশ্য দেখে কাছাকাছি থাকা বিজয়ের মাসতুতো দাদা, বছর পঁচিশের সুরেশ সব্বর সাপটির খোঁজ শুরু করে বাড়ির আশপাশে। একটি গর্ত থেকে টেনে বের করার সময় সাপটি তাঁকেও ছোবল মারে। দাদা-ভাই, দু’জনকেই ভর্তি করানো হয় মহকুমা হাসপাতালে। রাতে বিজয় মারা যায় সেখানে। শনিবার বিকেলেই পূর্বস্থলীর হাটসিমলা এলাকার বাসিন্দা মতিরুল রহমান বিষধর সাপের ছোবল খেয়ে ভর্তি হন মহকুমা হাসপাতালে।
শুক্রবারও মারা গিয়েছেন দুই জন। কালনা ২ ব্লকের বাদলা পঞ্চায়েতের কুমোরপাড়া এলাকায় নিজের মাটির বাড়ির মেঝেয় শুক্রবার রাতে শুয়ে ছিলেন বছর চল্লিশের বধূ যমুনা মালিক। মশারির ফাঁক দিয়ে ঢুকে ওই বধূর আঙুলে ছোবল মারে বিষধর সাপটি। সচেতনতার অভাবে যমুনাকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর অবস্থা আরও অবনতি হয়। ভোরে যখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, তখন চিকিৎসকদের আর কিছুই করার ছিল না। শুক্রবারই মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম এলাকায় আর এক বধূ নাসিরা খাতুনকে (৩০) শৌচাগারে যাওয়ার সাপে কাটে। মন্তেশ্বর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি মারা যান। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা চলতি মাসে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের।উল্লেখ্য মহকুমা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩০০ জন।এদের মধ্যে মারা যায় ১২ জন।
কালনা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই এত দেরি করে রোগীকে আনা হচ্ছে যে তখন হাতে বাঁচানোর সময় থাকছে না। হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, হাসপাতালে না এনে অনেকে সাপে কাটাদের প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করেন।’’ তিনি জানান, সাপে ছোবল মারার পরেই দ্রুত পৌঁছতে হবে কাছাকাছি এমন হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, যেখানে শয্যা রয়েছে। কারণ সেখানেই মিলবে সাপের বিষের প্রতিষেধক। তার আগে ক্ষতচিহ্নের পাশের জায়গায় হাল্কা করে একটি বাঁধন দিতে হবে। রোগীকে নিয়ে আসতে হবে এমন গাড়িতে, যেখানে ঝাঁকুনি কম হবে।
মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া রবিবার বলেন, ‘‘সাপের কামড় থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রচারে নামছে প্রশাসন। সোমবার থেকে এ ব্যাপারে মাইক প্রচার শুরু হবে। একই সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকায় কয়েকটি সচেতনেতা এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy