E-Paper

পলি সংস্কারে ধন্দ বাড়ছে দুই  মন্ত্রীর বয়ানে

২০১১ সালে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের করা সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এখন তা নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন ঘনমিটারে।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ০৮:৩৪

Sourced by the ABP

মাস ছয়েক আগে দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজভূষণ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ব্যারাজের পলি সংস্কারে কেন্দ্র থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটি পাঠানো হবে। কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে। সোমবার দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে এসে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানান, ব্যারাজের পলি তোলার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই মন্ত্রীর বয়ান নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

ডিভিসি দুর্গাপুর ব্যারাজ গড়ে ১৯৫৫ সালে। দামোদর-বরাকর অববাহিকার প্রায় সাড়ে ১৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে দুর্গাপুর ব্যারাজের ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকা। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের ছাড়া জল আসে এখানে। বরাকর, গাড়ুই, সিঙ্গারণের জলও এসে পড়ে দামোদরে। দুর্গাপুর ব্যারাজের জলতল ২১১.৫০ ফুট বজায় রাখতে হয়। সে জন্য অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিতে হয়। ব্যারাজ তৈরির পরে কোনও দিন পলি তোলার কাজ হয়নি। শুরুতে ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন ঘনমিটার। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের করা সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এখন তা নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন ঘনমিটারে।

ব্যারাজের পলি তোলা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য কাজিয়া চলছে দীর্ঘদিন। ২০১৩ সালে বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকের চিঠির জবাবে তৎকালীন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াত জানান, রাজ্য সরকার ব্যারাজে পলি ও বালি তোলার কাজ করবে। সহযোগিতা করবে কেন্দ্র। ২০১৬ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী দুর্গাপুরে এসে দাবি করেন, ঝাড়খণ্ড সরকার দামোদর সংস্কারে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন কোনও প্রস্তাব তিনি পাননি। যদিও রাজ্য সরকার সেই দাবি মানেনি।

২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রাজভূষণ ব্যারাজ পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে কথা বলবেন। বিশেষজ্ঞ কমিটি পরিদর্শন করে যে পরামর্শ দেবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। ব্যারাজ সংস্কারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেছিলেন, “সব কিছুতে রাজনীতি খোঁজা রাজ্যের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা দেশের, মানবতার স্বার্থের বিষয়। যা করার তা করতে হবে। কমিটি রাজ্য সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে।”

সোমবার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘দুর্গাপুর ব্যারাজের পলি তোলার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’-কে। সে জন্য শিল্প দফতরের অধীনে আলাদা একটি বিভাগ তৈরি করা হয়েছে।’’ বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘আমি উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে ব্যারাজ পরিদর্শনে এনেছিলাম। এত বড় কাজ কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। কেন্দ্র প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সে কথা জেনেই, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে পলি তোলার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে রাজ্য।’’ সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ব্যারাজে পলি তোলার কাজ যৌথ ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যকে করতে হবে। একা কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়।’’

যদিও জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যায় প্রতি বছর রাজ্যের বহু মানুষ বিপাকে পড়েন। ব্যারাজ নিয়ে কেন্দ্র সম্পূর্ণ উদাসীন। তাই কেন্দ্রের ভরসায় বসে না থেকে ব্যারাজ সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।” লক্ষ্মণের পাল্টা অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের উদাসীনতার জন্য মানুষ বিপদে পড়েন। রাজনীতি করতে দায় চাপানো হয় ডিভিসির উপরে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durgapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy