Advertisement
E-Paper

রাজ্যের দীর্ঘতম ঝুলন্ত রেলসেতু হচ্ছে বর্ধমানে!

রাজ্যের দীর্ঘতম ঝুলন্ত রেলসেতু তৈরি হচ্ছে বর্ধমানে। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ঢঙে বর্ধমান-আসানসোল লাইনের উপর কাটোয়া রোডে প্রায় ৮০ বছরের পুরনো ওভারবিজ্রের পাশেই সেতুটি তৈরি হচ্ছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:৩৬
রেলসেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। ছবি: উদিত সিংহ।

রেলসেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। ছবি: উদিত সিংহ।

রাজ্যের দীর্ঘতম ঝুলন্ত রেলসেতু তৈরি হচ্ছে বর্ধমানে।

দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ঢঙে বর্ধমান-আসানসোল লাইনের উপর কাটোয়া রোডে প্রায় ৮০ বছরের পুরনো ওভারবিজ্রের পাশেই সেতুটি তৈরি হচ্ছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮৯ মিটার।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি প্রসাদ বলেন, ‘‘রেল লাইনের উপর বর্ধমানের সেতুটি এই মুহূর্তে সবচেয়ে দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুর মূল অংশের কাজ শেষের দিকে। কয়েক সপ্তাহ আগে রেলের কর্তা, নির্মীয়মাণ সংস্থার আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মূল সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করার আগে জবরদখল করে থাকা দোকানপাট উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। রেলের কর্তা ও জেলা প্রশাসনের ধারণা, পরিকল্পনা মাফিক কাজ চললে পুজোর আগে অন্তত দুটি সংযোগকারী রাস্তার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের কালনা রোডে জেলাশাসকের দফতরের কাছ থেকে, জিটি রোডের দুর্গাপুরের দিকে লক্ষ্মীপুর মাঠে জোড়া মন্দির থেকে ও শহরের ভিতর গুরুদুয়ারের সামনে থেকে সংযোগকারী রাস্তা উঠে সেতুর সঙ্গে মিশবে। এ ছাড়া কাটোয়ার রোডের উপর বিজয়রামের কাছ থেকেও সংযোগকারী রাস্তা তৈরি হবে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘সেতু ও রাস্তা তৈরির মোট খরচ ২৫০ কোটি টাকা। সেতুর জন্য রেল ও রাস্তা তৈরির জন্য রাজ্য সরকার টাকা দিয়েছে।’’

চার লেনের এই সেতু তৈরি করছে কেবল স্টেট বিভাগের অধীনে থাকা ‘রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড’। রেল লাইন থেকে এই সেতুর উচ্চতা সাড়ে ৬ মিটার। সেতুর দু’পাশে দুটি পিলার থেকে কেবলের মাধ্যমে সেতুটিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখতে অনেকটা দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মতো। বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘নানা কারণে এই সেতুর কাজ মসৃণ ভাবে এগোয়নি। বাধা-বিঘ্ন কাটাতে বারবার রেলমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত লেগে থেকে টাকার অনুমোদন মিলেছিল। তারপরে ২০১২ সালের প্রথম দিকে সেতু তৈরির কাজ শুরুর হয়।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া রোডের উপর বর্তমান ওভারব্রিজটি অন্তত ৮০ বছরের পুরনো। বেশ কয়েক বছর আগে সেতুটির কার্যক্ষমতা ‘খাতায় কলমে’ ফুরিয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ওই ব্যস্ত রাস্তার উপরে সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বর্ধমানের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী বলেন, “আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, পুরনো সেতুর পিলারগুলি রয়েছে প্লাটফর্মের উপর। ফলে প্লাটফর্মটি বাড়ানো বা চওড়া করার কাজ করা যাচ্ছিল না। এ দিকে দিনে দিনে ট্রেনের কামরা বাড়ছে। বর্ধমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে মাত্র ৫টি প্লাটফর্ম দিয়ে বেশি কামরার ট্রেন যাতায়াত করাতে গিয়ে আমাদের চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছিল।” নতুন সেতু হলে প্ল্যাটফর্মের ভোলবদলেও সুবিধা হবে।

জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে রেল কাটোয়া রোডের উপর নতুন সেতুর পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু রাজ্য সরকারেরর কাছ থেকে আশ্বাস না মেলায় বিষয়টি থমকে যায়। ২০০৭ সালের শেষ দিকে সেতু তৈরির পরিকল্পনাটা বাতিলের মুখে নড়ে বসে বাম সরকার। তড়িঘড়ি ২০০৮ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন, জেলা সভাধিপতি উদয় সরকার ও পুরপ্রধান আইনুল হক কলকাতায় পূর্ত দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরেই সরকার বর্ধমানের সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির খরচ দেবে বলে জানানো হয়। রেল ও রাজ্য যৌথ ভাবে আইআইটির সাহায্যে নকশা তৈরি করে। তারাই রেলকে জানায়, প্লাটফর্ম বাঁচাতে গেলে ‘কেবল্ ব্রিজ’ তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনা বাস্তব আকার নিচ্ছে এখন।

hanging bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy