E-Paper

অভাব, সঙ্কটের বাধা পেরিয়েই পরীক্ষায় সফল ওঁরা

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের খরসগ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ রুদ্র নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯৫.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৮:৩১
(বাঁ দিকে)সুস্মিতা দত্ত, গৌরাঙ্গ রুদ্র(ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে)সুস্মিতা দত্ত, গৌরাঙ্গ রুদ্র(ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

অভাব-সঙ্কট ও ব্যক্তিগত বিপর্যয়কে অতিক্রম করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছেন পূর্ব বর্ধমানের তিন পড়ুয়া। কারও বাবা গাড়ি চালক, কারও বাবা প্রান্তিক কৃষক। কেউ আবার বাবাকে হারিয়ে পরীক্ষায় বসেছেন—তবুও হার মানেনি তাঁরা।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের খরসগ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ রুদ্র নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৯৫.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর বাবা অরূপ প্রান্তিক কৃষক। বছরে আড়াই-তিন বিঘা জমির চাষেই চলে সংসার। অনেক বছর ফসলের দাম না পেলে ঋণে ডুবে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭৬ নম্বর পেয়েছেন গৌরাঙ্গ। তিনি জানান, পদার্থবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পড়তে চান। তবে লক্ষ্য নিট পরীক্ষায় সফল হয়ে ডাক্তার হওয়া।

কিন্তু আর্থিক অনটন বড় বাধা। গৌরাঙ্গ বলেন, “নিট পরীক্ষায় পরীক্ষায় সফল হতে গেলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, আমাদের তা নেই। কেউ সাহায্যে এগিয়ে এলে স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।” স্কুলের শিক্ষক অরূপ চৌধুরী বলেন, “ছোট থেকেই মেধাবী ও ভদ্র ছেলে গৌরাঙ্গ। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমার আবেদন কোনও সংস্থা অথবা কোনও মহৎ মানুষ ওর সাহায্যে এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনীয় সাহায্য পেলে ও আরও সফল হবে।”

বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড় সিনেমাতলার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দত্ত অন্যের গাড়ি চালিয়ে মেয়ের পড়ার খরচ চালান। মেয়ে সুস্মিতা দত্ত বড়শুল সিডিপি হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৯২ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯০, পদার্থবিদ্যায় ৯০, রসায়নে ৮৮, জীববিজ্ঞানে ৯৬ ও কম্পিউটারে ৯৩ পেয়েছেন তিনি। সুস্মিতা জানান, স্কুলের শিক্ষক ও লাইব্রেরি থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। এখন নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাবা রবীন্দ্রনাথ বলেন, “সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, কখন ফিরব জানা থাকে না। ওর মাই সব সামলান।” মা মামণি বলেন, “বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ বেশি। তবে গৃহশিক্ষকেরা অনেক সাহায্য করেছেন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘটক বলেন, “শান্ত স্বভাব ও অধ্যবসায়ই ওকে এই জায়গায় এনেছে। আমরা গর্বিত।” সাফল্যে খুশি হলেও বাবা-মায়ের এখন চিন্তা এত সল্প আয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবেন কী করে, তা নিয়ে।

উচ্চ মাধ্যমিকের তিন দিন আগে ব্রেন স্ট্রোকে বাবার মৃত্যু হয়। সাদা থান পরে পরীক্ষায় বসে বিজ্ঞান বিভাগে ৭৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন মন্তেশ্বরের সাগরতলা হাই স্কুলের স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা তাঁর। মা মৌসুমী বলেন, “ওর বাবার অসুস্থতার কারণে আর্থিক ভাবে পরিবার দুর্বল হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর পরে সংসার চালানো ও ছেলের পড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

যদিও স্বর্ণাভ আশাবাদী। বিভিন্ন স্কলারশিপ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে স্বপ্ন সফল করে তুলতে বদ্ধপরিকর তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত ঘোষ এবং পরীক্ষাকেন্দ্র মালডাঙা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস পাত্র বলেন, “যে পরিস্থিতির মধ্যে ছাত্রটি পরীক্ষায় বসেছে এবং মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা সত্যই প্রশংসনীয়। এলাকার মানুষ-সহ আমরা সকলেই ওর পাশে থাকার চেষ্টা করব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy