সুনসান কারখানা। নিজস্ব চিত্র।
কনসর্টিয়ামের প্রধান অংশীদার ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল) প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি। ফলে, উদ্যোগের ছ’বছর পরেও দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) খোলার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েই গিয়েছে। তবে, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিআইএল) সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানা খোলার উদ্যোগ পুরোপুরি থেমে নেই। অচলাবস্থা কাটাতে কয়েক মাস আগে একটি টাস্ক ফোর্সও গড়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনে ১৯৬৫ সালে চালু হয় এমএএমসি। মূলত খনির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরি হত এখানে। নানা কারণে কারখানাটি একসময় রুগ্ণ হয়ে পড়ে। ১৯৯২ সালে তা ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এর অধীনে চলে যায়। ২০০১-এর ৫ অক্টোবর কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৫-এর ২৮ এপ্রিল কারখানাটি লিক্যুইডেটরের হাতে চলে যায়।
ফের কারখানাটি চালু করার আগ্রহ দেখিয়ে ২০০৭-এর ১ জুন তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল), ‘কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (সিআইএল) ও ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’ (ডিভিসি) যথাক্রমে ৪৮, ২৬ ও ২৬ শতাংশ অংশীদারিত্বে কনসর্টিয়াম গড়ার জন্য ‘মৌ’ চুক্তি করে। ২০১০-এর ১১ জুন কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ একশো কোটি টাকা দর দিয়ে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায় কনসর্টিয়াম। ১৮ অগস্ট লিক্যুইডেটর পি কে গাইথরের হাত থেকে কনসর্টিয়াম কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয়। নতুন নাম হয় ‘এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। কনসর্টিয়ামের চুক্তি অনুযায়ী কারখানায় উৎপাদনের দায়িত্বে থাকার কথা বিইএমএলের। উৎপাদিত খনি যন্ত্রাংশের ক্রেতা সিআইএল। তাদের উত্তোলিত কয়লা কিনবে ডিভিসি। এ ভাবেই এমএএমসি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে কনসর্টিয়ামের। তিন সংস্থা ‘শেয়ার হোল্ডিং এগ্রিমেন্ট’-এর বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু বিইএমএল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
তবে কি কারখানা খোলার প্রক্রিয়া একেবারে থমকে রয়েছে? কোল ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের হাতে দু’শোর উপর চালু খনি রয়েছে। কী ভাবে সেই সব খনি থেকে কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করা যায়, উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে সংস্থা। বিদেশ থেকে খনি যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হচ্ছে। কোল ইন্ডিয়াই ছিল পূর্বতন এমএএমসি-র সবথেকে বড় ক্রেতা। এখনও তাদের বহু খনিতে যে সব যন্ত্রাংশ কয়লা উত্তোলনে ব্যবহৃত হয় তা এমএএমসি-র তৈরি। তাই ফের এমএএমসি চালু করতে পারলে সুবিধা হবে কোল ইন্ডিয়ার। অচলাবস্থা কাটাতে মাস ছয়েক আগে কনসর্টিয়ামের তিন সংস্থা মিলে একটি টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। কিন্তু টাস্ক ফোর্স কতটা এগিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।
সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী জানান, কয়েক মাস আগে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন। বিনয়েন্দ্রবাবু আরও জানান, প্রাথমিক ভাবে দশ বছরের জন্য কনসর্টিয়ামের তিন সংস্থা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনও সংস্থা সরে দাঁড়াতে পারবে না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কনসর্টিয়াম গড়ার পরে ৯ বছর পেরিয়েছে। এমএএমসি খোলার আশু সম্ভাবনা নজরে আসছে না। কেন্দ্র, বা রাজ্য সরকার, কোনও তরফেই সাড়া দেখছি না।’’ কারখানার আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, কনসর্টিয়ামের তিন সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। কারখানা খোলার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। কবে, সেই উত্তর আপাতত কারও কাছে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy