অব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে ছোটদের দোলনা। নিজস্ব চিত্র।
ফাঁকা ক্লাসঘর। নেই ছোটদের কলরব। কমতে কমতে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্যে ঠেকেছে। ফাঁকা স্কুলে সারা দিন বসে থেকে যন্ত্রণার প্রহর কাটাচ্ছেন দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা। কালনার ‘স্বামী নিত্যগৌরবানন্দ বিদ্যাপীঠ’-এর এখন এমনই অবস্থা। পরিস্থিতির কথা প্রশাসনকে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
কালনা মহকুমা হাসপাতালের উল্টো দিকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুল শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। স্কুল গড়তে জমি দিয়েছিল নেতাজির স্মৃতিধন্য জ্ঞানানন্দ মঠ কর্তৃপক্ষ। এক সময়ে এই স্কুলে ৩০০-র বেশি পড়ুয়া ছিল। ক্রমশ কমতে থাকে সে সংখ্যা। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০২০ সালে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২১। ২০২১ সালে দাঁড়ায় ১১ জনে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা শূন্য হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় মিড-ডে মিল।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রুমা ঘোষ মণ্ডল জানান, এর পরেই তিনি বিডিও, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান থেকে কালনা পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন স্কুলের অবস্থার কথা। ওই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়াতে চাইছেন না। তার কারণ হল— নিকাশি ব্যবস্থা ভাল না থাকায়, ভারী বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষের ভিতরে হাঁটুজল জমে যায়। পাশের এসটিকেকে রোড চওড়া হওয়ায় দ্রুত গতির গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তাই বিপদের আশঙ্কায় থাকেন অবিভাবকেরা। কাছাকাছি লোকালয় না থাকায় নতুন ছাত্রছাত্রী পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
মঙ্গলবার কালনা শহর লাগোয়া হাটকালনা পঞ্চায়েতের মিরপুর মৌজার এই স্কুলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ছোট্ট একটি অফিস ঘরে একলা বসে রয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। বারান্দায় একটি চেয়ারে বসে আর এক শিক্ষক তাপস সিংহ রায়। স্কুলের বারান্দা এবং তিনটে ঘরে জ্বলজ্বল করছে স্বাস্থ্য বিধানের গান, ইংরেজিও বাংলায় লেখা ছড়া। অফিস ঘরে একটি কোণে পড়ে রয়েছে মিড-ডে মিল রান্নার বাসন, ভাঙা চেয়ার এবং বেশ কিছু পুরানো বইপত্র। এক দশক আগে স্কুলে যে পাকা ঘরটি তৈরি হয়েছিল তার আশপাশে গজিয়েছে লম্বা লম্বা ঘাস। রোদ-বৃষ্টিতে মরচে পড়েছে লোহার দোলনায়। স্কুলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও বছরখানেক আগে ঝড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ার পরে, আর বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়নি।
দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা না এলেও নিয়ম মেনে রোজ বেলা সাড়ে ১০টার তাঁরা স্কুলে চলে আসেন। দুঃসহ গরমে চুপচাপ বসে বিকেলে ফেরেন। তাপস বলেন, ‘‘বছর খানেক পরেই আমার অবসর। স্কুলে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। লাভ হয়নি। ফাঁকা স্কুলে কোনও শিক্ষকের এ ভাবে বসে থাকতে ভাল লাগে?’’ প্রধান শিক্ষিকা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পরস্থিতির কথা বলেছেন।
কালনা পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রুমা ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুলটির পরিস্থিতির বিষয়টি জেলা প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের নজরে আনা হয়েছে। সেখান থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy