বাড়ি থেকে মোটর বাইক নিয়ে বার হওয়ার আগে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের বলে গিয়েছিলেন, ‘সন্ত্রাস বন্ধের স্লোগান নিয়ে তিনি যাবেন লাদাখ’। ঠিক করেছিলেন, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে যে কাশ্মীরে প্রাণ গিয়েছে বহু নিরীহ মানুষের, সেখানে তুলে ধরবেন সন্ত্রাসবন্ধের বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড।প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বাইক চালিয়ে সেই কাজ করলেন কালনার বাঘনাপাড়ার এক উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা সুতপা দেবনাথ।
এই প্রথম নয়। কন্যাশিশুরক্ষা-সহ নানা সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। দেশের নানা প্রান্তে চালান প্রচার। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা এই শিক্ষিকা এ বার অভিযানের আগে সঙ্গে নেন কিছু শুকনো খাবার এবং শীতের পোশাক। ঠিক করেছিলেন, দৈনিক ৫০০ কিলোমিটার বাইক চালাবেন। অভিযানের সপ্তম দিনে তিনি পৌঁছন লাদাখ। পাদুমে এক রাত কাটিয়ে তিনি আসেন লেহ শহরে। আসার পথে দুর্যোগের কারণে বন্ধ ছিল একটি রাস্তা। শেষ পর্যন্ত ঝঙ্কার নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক রাস্তা দিয়ে তাঁকে পৌঁছতে হয় লেহ শহরে। তার পরে যাত্রা শুরু হয় কাশ্মীর অভিমুখে।
কাশ্মীরে পৌঁছে কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল, ডাল লেক-সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে তিনি তুলে ধরেন ‘স্টপ টেররিজম’ লেখা প্ল্যাকার্ড। বুধবার কুরুক্ষেত্রে পৌঁছেছেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘‘পাহেলগামে সন্ত্রাসবাদীর হামলার পরেই প্রতিবাদ জানাব বলে ঠিক করি। মনস্থ করি, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার স্লোগান দিয়ে পৌঁছে যাব কাশ্মীরে। পরিবার এবং আত্মীয়েরা যাতে ভয় না পান, সে কারণে কাশ্মীরের কথা গোপন করে শুধুমাত্র লাদাখে যাওয়ার কথা বলেছিলাম।’’ তিনি জানান, দীর্ঘপথে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে কখনও হাল ছাড়েননি। ‘‘সন্ত্রাসবাদীরা যে কাশ্মীরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছিল, সেখানে পৌঁছে প্রতিবাদ জানাতে পেরেছি,’’ বলেন শিক্ষিকা। আরও চার বার কাশ্মীরে গিয়েছেন তিনি। তবে এ বার কাশ্মীর তাঁর কাছে অচেনা মনে হয়েছে। তাঁর বর্ণনায়, ‘‘হোটেল, রাস্তায়, শিকারা কোনও জায়গায় ভিড় নেই। কিছু এলাকা জনশূন্য।’’ এখন তিনি ফেরার পথে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)