Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সিরাপের নেশায় বুঁদ অল্পবয়সীরা

সিরাপ কেনা এতই সহজ যে, কেউ সন্দেহ করবে না। একে হাতিয়ার করে নেশা করার প্রবণতা বাড়ছে আট-থেকে আশি সব বয়সের মধ্যে, বলে পুলিশ ও নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

সর্দি-কাশি হলেই ছোট-থেকে বড় সব বয়সের মানুষ ছোটেন ওষুধ দোকানে। কিন্তু অধিকাংশের হাতে প্রেসক্রিপশন দেখা যায় না। কিন্তু তাতে কী? মুখে বললেই তো মিলে যায়।

সিরাপ কেনা এতই সহজ যে, কেউ সন্দেহ করবে না। একে হাতিয়ার করে নেশা করার প্রবণতা বাড়ছে আট-থেকে আশি সব বয়সের মধ্যে, বলে পুলিশ ও নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে। এর ফলে ক্যানসার-সহ নানা রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ।

বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কাশির সিরাপ হিসেবে ফেন্সিডিল ও কোরেক্সের বিক্রি বেশি। সিরাপের কমবয়সী ক্রেতা বেড়েছে গত কয়েক বছরে, জানিয়েছে বিভিন্ন ওষুধ দোকান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেশা করা একাধিক কলেজ পড়ুয়া জানিয়েছেন, মদ্যপানের খরচ বেশি। ধরা পড়ে যাওয়ারও ভয় আছে। সেখানে অল্প দামে সিরাপ কিনে কাজ চলে যায়। তা ছাড়া প্রকাশ্যে সিরাপ খেলেও সাধারণত কেউ সন্দেহ করেন না। সিরাপ শরীরে যাওয়ার পরে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। মনে হয় যেন একটা আলাদা জগতে চলে গিয়েছেন। কেউ শুধু সিরাপ খেয়ে নেশা করে। কেউ বা চায়ে মিশিয়ে খায়। প্রতি বোতলে ফেন্সিডিল থাকে ১০০ মিলিলিটার। এক কাপ চায়ে চার ভাগের একভাগ পরিমাণ ঢেলে দেওয়া হয়। গরম কিছুর সঙ্গে খেলে নেশার মাত্রা বাড়ে। তা ছাড়া চায়ের গন্ধে সিরাপের গন্ধও চলে যায়।

সিরাপ পাচারের ঘটনা এই রাজ্যে অতীতে প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১২ সালে আলুর বস্তার নীচে এক কোটি টাকার কাশির সিরাপ পাচারের সময়ে শিলিগুড়ির অদূরে ঘোষপুকুর ফুলবাড়ি বাইপাস এলাকায় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকেরা চার জনকে গ্রেফতার করেন। তাদের বাড়ি বর্ধমানের মন্তেশ্বরে। দু’টি ট্রাকে আলু বোঝাই করে তারা ত্রিপুরায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। আলুর বস্তার নীচে প্রায় ২৭ হাজার বোতল কাশির সিরাপ ছিল। রবিবার কাঁকসা থানার পুলিশ পানাগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে কাপড় দিয়ে মোড়া ১৯টি প্যাকেট থেকে মোট ১৯০০ বোতল কাশির সিরাপ ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। ট্রাক চালক পালিয়ে যায়। ট্রাকটি দুর্গাপুরের দিক থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল। তবে কোথায় সেগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কাশির ওষুধ একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি খেলে তা শরীরের জন্য বিপজ্জনক। যকৃতের ক্ষতি হয়। মানসিক অবসাদ বাড়তে থাকে। নিয়মিত সিরাপ সেবনে খাদ্যনালী আক্রান্ত হয়। তা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া মুখের ভিতরে ক্ষত, চর্মরোগ, স্নায়ু ও মস্তিস্কের সমস্যা হতে পারে।

দোকানদারদেরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘সচেতনতা ও নজরদারির অভাবেই কাশির সিরাপ নেশার কাজে লাগানো হচ্ছে। সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে।’’ শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, শরীরে কাশির সিরাপের বিপজ্জনক প্রভাবের কথা জেনেও পড়ুয়াদের কেউ কেউ এমন নেশায় আশক্ত। বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, কলেজের ভিতরে কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধরা পড়লে তাকে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে। কিন্তু কলেজের বাইরে কেউ নেশা করলে তা কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে না।

কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী জানিয়েছেন, নেশার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ার প্রচেষ্টা বছরভর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘‘পানাগড়ে কাশির সিরাপ উদ্ধারের পরে এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Syrup Teenagers Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE