E-Paper

বাবার অভিজ্ঞতা অনুভবে আমেরিকা থেকে বর্ধমানে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোনাল্ডের বাবা কার্লিস বোম্যান প্রায় এক বছর পানাগড়ের সেনা ছাউনিতে ছিলেন। বর্ধমান রাজবাড়ি, কলকাতা, আসানসোলেও তাঁর স্মৃতি ছড়িয়ে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪২
বর্ধমানে কার্লিস বোম্যান।

বর্ধমানে কার্লিস বোম্যান। ছবি সৌজন্যে ছেলে রোনাল্ড বোম্যান।

‘বাবা’ এসেছিলেন বর্ধমানে। ছিলেন। ঘুরেছিলেন। তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫)। বাবার মুখে শোনা ভিন‌্ দেশের সে গল্প মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। বাবাকে হারিয়েছেন কৈশোরে। তাঁর কাছে শোনা গল্প, ছবির স্মৃতি নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বর্ধমানকে অনুভব করতে চাইছেন ছেলে, মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রোনাল্ড বোম্যান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোনাল্ডের বাবা কার্লিস বোম্যান প্রায় এক বছর পানাগড়ের সেনা ছাউনিতে ছিলেন। বর্ধমান রাজবাড়ি, কলকাতা, আসানসোলেও তাঁর স্মৃতি ছড়িয়ে। বাবার কাছে সে সব জায়গার গল্প শুনেছিলেন কিশোর রোনাল্ড। পেয়েছিলেন কিছু ছবি। সে সবই তাঁর ভ্রমণের পাথেয়।

কার্লিস ছিলেন আমেরিকার সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে পানাগড়ে এসেছিলেন। ১৯৪৫-এর ডিসেম্বরে আমেরিকায় ফিরে যান। ওই সময় তিনি বর্ধমান রাজবাড়িতেও যান। তখন বর্ধমানের রাজা ছিলেন উদয়চাঁদ মহতাব।

বর্ধমানের একটি হোটেলে তিন দিন ধরে রয়েছেন রোনাল্ড। বাবার কাছ থেকে পাওয়া ছবি নিয়ে বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখছেন। বাবার মুখে শোনা কাহিনির বাস্তব প্রেক্ষাপট এখন কেমন দেখতে জানার চেষ্টা করছেন। গিয়েছেন বর্ধমান রাজবাড়ির প্রত্নশালাতেও। ওই প্রত্নশালার দায়িত্বে থাকা শ্যামসুন্দর বেরা বলেন, “বর্ধমান রাজবাড়ির বেশ কয়েকটা অমূল্য ছবি রোনাল্ডের কাছে রয়েছে। ছবি দেখে তিনি রাজবাড়ির দু’টি জায়গা চিহ্নিত করেছেন। প্রতিটি ছবির বর্ণনা দিয়ে গিয়েছেন রোনাল্ডের বাবা কার্লিস।”

শ্যামসুন্দর জানান, রাজবাড়ি ঘুরে দেখার ফাঁকে একটি জায়গা খুঁজে পান রোনাল্ড, যেখানে তাঁর বাবা সেনার পোশাকে দাঁড়িয়েছিলেন। মুগ্ধ হন রাজবাড়ির (মহতাব মঞ্জিল) দক্ষিণ দিকে ইতালীয় স্থাপত্য দেখে। রোনাল্ড বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল হিসেবে এই বাড়িটিকে তুলে ধরা উচিত। সংস্কারও প্রয়োজন।’’

২০১৭ সালে মহতাব মঞ্জিলকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। রোনাল্ডের কাছে বর্ধমান রাজবাড়ির কাছারি বাড়ি, মহতাব মঞ্জিলের পূর্ব দিকে হাতি ও মাহুত, হাতির পিঠে সওয়ার সৈনিক, দেওয়াল জুড়ে থাকা পাঁচটি তৈলচিত্র ও সিংহাসনের ছবি রয়েছে। একটি ছবিতে বিমান চালকের মতো পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উদয়চাঁদ। শ্যামসুন্দরের দাবি, “ওই তৈলচিত্রগুলির মধ্যে একটি এখনও রাজবাড়ির প্রত্নশালায় রয়েছে।” রোনাল্ড জানান, বাবার স্মৃতি খুঁজতেই বাংলায় এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, “এখানকার জায়গাগুলোয় থাকার সময় বাবার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেগুলো অনুভব করার চেষ্টা করছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman USA World War II

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy