Advertisement
E-Paper

জায়গা পেলেই গজিয়ে ওঠে ক্লাব

মাইকে করে প্রচার করা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সাত দিনের সময়সীমা। তা সত্ত্বেও কেউ জিনিসপত্র সরিয়ে না নেওয়ায় দখল উচ্ছেদের অভিযানে নামতে তারা বাধ্য হয়েছে, এমনই দাবি ইস্কোর। সংস্থা কর্তৃপক্ষের একটি অংশের দাবি, দখল করে রাখা জমির উপরে গজিয়ে ওঠা কিছু ঝুপড়িতে অসামাজিক কাজকর্ম হয়।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০০:৪২
বেআইনি ভাবে জমি দখল করে তৈরি হয়েছে এই রকম পার্টি অফিসও, অভিযোগ ইস্কো কর্তৃপক্ষের। ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

বেআইনি ভাবে জমি দখল করে তৈরি হয়েছে এই রকম পার্টি অফিসও, অভিযোগ ইস্কো কর্তৃপক্ষের। ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

মাইকে করে প্রচার করা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সাত দিনের সময়সীমা। তা সত্ত্বেও কেউ জিনিসপত্র সরিয়ে না নেওয়ায় দখল উচ্ছেদের অভিযানে নামতে তারা বাধ্য হয়েছে, এমনই দাবি ইস্কোর। সংস্থা কর্তৃপক্ষের একটি অংশের দাবি, দখল করে রাখা জমির উপরে গজিয়ে ওঠা কিছু ঝুপড়িতে অসামাজিক কাজকর্ম হয়। যদিও উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের অনেকেই জানান, তাঁরা অনেক দিন ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন। পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা না করে এই ধরনের পদক্ষেপ অমানবিক বলে দাবি তাঁদের।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বারি ময়দান, হিরাপুর থানা, বার্নপুর বাজার-সহ নানা এলাকায় সংস্থার জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদে নামে ইস্কো। শতাধিক অবৈধ নির্মাণ ও দোকান ভেঙে ফেলা হয়। ক্ষুব্ধ দোকানদারেরা বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধে অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকা। শনিবার অবশ্য নতুন করে আর কোনও গোলমাল হয়নি। মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘১৯ মে পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি রয়েছে। অশান্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন কোনও পদক্ষেপ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইস্কো কর্তৃপক্ষকে।’’ ইস্কো কর্তৃপক্ষ জানান, উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে ফের অভিযান হবে।

ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, উপযুক্ত দেখভালের অভাবে সংস্থার নানা জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। অভিযোগ, এই রকম বেশ কিছু ঝুপড়িতে রাতে মদ-জুয়ার ঠেক চলে। ফলে, শহর জুড়ে বহিরাগত দুস্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। শহরে ইস্কোর বেশ কিছু পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে। সেগুলিতেও দুস্কৃতীরা ডেরা বাঁধছে, অপরাধমূলক কাজ করছে বলে অভিযোগ। বছর তিনেক আগে স্টেশন রোড লাগোয়া এই রকমই একটি আবাসন থেকে বছর সাতেকের এক বালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার উপরে নির্যাতন চালিয়ে দুষ্কৃতীরা খুন করেছিল বলে অভিযোগ। সেই সময়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো অশান্ত হয়ে ওঠে শহর।

ইস্কো কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রের দাবি, সংস্থার টাউন ও এস্টেট দফতরের কিছু অসাধু কর্মীর মদতে ফাঁকা জমিতে বেআইনি ভাবে দোকান ও ঝুপড়ি তৈরি হচ্ছে। পরিত্যক্ত আবাসনে বহিরাগতেরা ঢুকে পড়ছে। শুধু তাই নয়, শহরের মধ্যে দোকান করার জন্য ইস্কো যাঁদের নির্দিষ্ট অনুমতি দিয়েছে, তাঁরাও নিয়ম ভাঙছেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, আবাসিকদের সান্ধ্য ও প্রাতর্ভ্রমণের জন্য যে সব জায়গা ফাঁকা রেখেছিল সংস্থা, তার মধ্যে বেশ কিছু জমিতে ক্লাব অথবা রাজনৈতিক দলের কার্যালয় গজিয়ে উঠেছে। এমনকী, শিশুদের খেলার মাঠও দখল হচ্ছে। এর ফলে শহরের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ।

ইস্কোর তরফে জানানো হয়, ইস্পাত শহরের কয়েক হাজার আবাসিক ও আশপাশের ব্যক্তিগত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বার্নপুরে চারটি স্থায়ী বাজার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। নানা এলাকায় শতাধিক ব্যবসায়ীকে অস্থায়ী দোকান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যেখানে-সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি দোকান। জানা গিয়েছে, বার্নপুরের ডেলি মার্কেটে দেড় হাজারের বেশি দোকান আছে। ছোটদিঘারি ও স্টেশন রোড এলাকার দু’টি স্থায়ী বাজারে আরও শতাধিক দোকান রয়েছে। বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য বেশ কয়েকটি কমিউনিটি হলও গড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও নানা অছিলায় শহরে অবৈধ দখলদারি চলছে।

ইস্কোর টাউন ও এস্টেট দফতরের জেনারেল ম্যানেজার কৌশলকুমার ঝা জানান, প্রায় দু’শোটি পরিত্যক্ত আবাসন থেকে অবাঞ্ছিতদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে শতাধিক দোকান ও ঝুপড়ি। তিনি বলেন, ‘‘উচ্ছেদ অভিযান আবার হবে। শহরের ফাঁকা জমিতে গড়ে ওঠা ক্লাব, রাজনৈতিক দলের অফিস কেনও কিছুই বাদ যাবে না।’’ তিনি আরও জানান, নির্দিষ্ট নিয়মে অনেককে স্থায়ী দোকান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাঁরা সেই নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন, তাঁদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। অনেকে আবার অনুমতিপত্র পুনর্নবীকরণ করেননি। নির্দিষ্ট টাকাও জমা দেননি। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যদিও শুক্রবারের অভিযান নিয়ে ক্ষোভ কমেনি উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের। তাঁদের দাবি, মাইকে প্রচার করা হলেও নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যাপারেও কোনও চিন্তাভাবনা করা হয়নি। অথচ, সকালে যখন দোকানগুলি বন্ধ ছিল, সেই সময়ে সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের অনেকেরই মত, যে সব ঝুপড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ হত বলে ইস্কো কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, সেগুলিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এমনকী, শুক্রবারের অভিযানের ব্যাপারে প্রশাসনকেও ইস্কো আগাম কোনও খবর দেয়নি বলে তাঁদের দাবি।

আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, ইস্কোর অভিযানের ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনও খবর ছিল না। কেন প্রশাসনকে অভিযানের ব্যাপারে আগে কিছু জানানো হল না, সে ব্যাপারে ইস্কো কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Asansol Jitendra Tiwari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy