তালা ভেঙে চুরি। নিজস্ব চিত্র।
শীত পড়তেই পরপর দুষ্কর্ম ঘটছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বিভিন্ন গ্রামে। মাস দুয়েকের মধ্যে এক রাতে পাঁচটি, এক রাতে তিনটি বাড়ি-দোকানে চুরি হয়েছে। সোমবার রাতেও কানপুর গ্রামের ছ’টি মন্দিরে তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গ্রামের একাধিক মুদির দোকান ও ডাকঘরেও ওই রাতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মন্তেশ্বরের বহু পুরনো গ্রাম কানপুর। বেশির ভাগ বাড়ির সঙ্গেই মন্দির রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, মঙ্গলবার সকালে তাঁরা দেখেন তিনটি নারায়ণ মন্দির, একটি সর্বমঙ্গলা, অভয়া ও বলরামজিউ মন্দিরের তালা ভাঙা। কোথাও দুষ্কৃতীরা দরজার তালা ভেঙে, কোথাও গ্রিল ভেঙে ভিতরে ঢোকে বলে অভিযোগ। ঠাকুরের সোনা, রুপোর পৈতে, সোনার টিপ, কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র, পুজোর ঘণ্টা নানা জিনিস চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ।
গ্রামের এক বাসিন্দা হরেকেষ্ট ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘নারায়ণ মন্দিরের তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা সোনার তুলসি পাতা, রুপোর পৈতে এবং একটি তামার ঘটি নিয়ে চম্পট দিয়েছে।’’ আর এক বাসিন্দা হিল্লোল বন্ধুর দাবি, তাঁদের পারিবারিক মন্দির থেকেও চুরি গিয়েছে সোনা, রুপোর পৈতে, সোনার টিপ, পিতলের ঘণ্টা এবং কাঁসার বাসনপত্র। মন্দিরের কাছে ডাকঘরের তালা ভেঙেও দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। লাগোয়া একটি বাড়ি থেকে নগদ বেশ কয়েকহাজার টাকাও চুরি গিয়েছে, দাবি তাঁদের।
তবে এক রাতে পরপর চুরিতে আতঙ্ক বেড়েছে এলাকায়। আরও শীত পড়লে দরজা-জানালা বন্ধ, রাস্তায় লোক থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কর্ম বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এলাকার এক বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘মন্দিরে চুরির অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভাল নয়। দুষ্কৃতীরা যতক্ষণ না ধরা পড়ে, একের পরে এক মন্দিরে দুষ্কর্ম ঘটতে থাকে। আমরা চাই, পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের ধরুক। যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।’’
এলাকার অনেকেরই দাবি, সম্প্রতি মেমারি থানার সাতগাছিয়া এলাকার একটি কালীমন্দিরে এবং নাদনঘাট থানার খরজপুর এলাকার দুটি মন্দিরেও হানা দেয় চোরেরা। তার আগে ২০ অক্টোবর ধেনুয়া এবং গলাতুন এলাকায় তিনটে বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। নগদ টাকা এবং কয়েক লক্ষ টাকায় গয়না চুরি যায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরের দিন চুরি যাওয়া একটি মোটরবাইক ঝিকরা এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। ১১ নভেম্বর মাঝেরগ্রাম এলাকায় ফের তিনটি দোকান ও দুটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতীরা এলাকার উপপ্রধান সুমন্ত রায়ের বাড়িতেও চুরির চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। তবে লোকজন জেগে যাওয়ায় তারা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘটনারই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘সোমবার রাতের ঘটনার পরে, নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
প্রতি বছরই শীতে মন্তেশ্বর এলাকায় চুরি বা অপরাধ বাড়ার একটা প্রবণতা থাকে। ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে দুষ্কৃতীরা এলাকার ১০টি মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি করে। ২০১৫ সালে শীতকাল জুড়ে প্রায় ২২টি মন্দিরে চুরি হয়। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার দাবিতে মেমারি-মালডাঙা রোডে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। ২০১৮ সালেও ডিসেম্বরে মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতে এক রাতে বড়মা কালী, শ্রীধর মন্দির-সহ পাঁচটি মন্দির থেকে চুরি যায় নানা জিনিস। ২০১৯ সালেও মে মাস সিংহালি গ্রামে দু’টি শিবমন্দির থেকে বেশ কিছু সামগ্রী চুরি যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy