Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুনর্বাসন নেই, দিন কাটে ধসের আতঙ্কে

এলাকা জুড়ে জমিতে আঁকাবাঁকা ফাটল। সেখান থেকে মাঝে-মধ্যেই বেরোয় ধোঁয়া। আর বাসিন্দারা আতঙ্কে ভোগেন, কখন হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে যায় গোটা এলাকা। ধসের আতঙ্ক নিয়েই বেঁচে রয়েছেন বারাবনির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। বহু বছর ধরে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কেউ প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। কেউ আবার তা-ও পাননি।

রসুলপুরে মাটি ফুঁড়ে আগুন। ছবি: শৈলেন সরকার।

রসুলপুরে মাটি ফুঁড়ে আগুন। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
বারাবনি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

এলাকা জুড়ে জমিতে আঁকাবাঁকা ফাটল। সেখান থেকে মাঝে-মধ্যেই বেরোয় ধোঁয়া। আর বাসিন্দারা আতঙ্কে ভোগেন, কখন হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে যায় গোটা এলাকা।

ধসের আতঙ্ক নিয়েই বেঁচে রয়েছেন বারাবনির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। বহু বছর ধরে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কেউ প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। কেউ আবার তা-ও পাননি।

আসানসোল-দুর্গাপুর খনি অঞ্চলের অন্য শহরগুলির মতোই বারাবনিরও বড় সমস্যা এই ধস ও মাটি ফুঁড়ে আগুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, খনি ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকাকালীন মাটির তলার কয়লা তুলে ফাঁকা অংশ ঠিক মতো বালি ভরাট না করার ফলেই এই পরিস্থিতি। এখন মাঝে-মাঝে সে সব এলাকায় ফাটল হয়, ধস নামে। আবার এক শ্রেণির কয়লা মাফিয়া প্রচুর অবৈধ খাদান বানিয়ে কয়লা তোলে। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি এই খাদানগুলিতে বাতাস ঢোকার ফলে কয়লার স্তরে আগুন ধরে যায়। তার জেরে ধস ও ফাটলের সমস্যায় ভুগতে হয় বাসিন্দাদের। বারাবনির নানা এলাকায় এই সমস্যায় জেরবার।

জামগ্রামের রসুনপুর অঞ্চলে যে কোনও সময়ে গেলেই দেখা যায়, যেখানে-সেখানে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে আগুন, বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া। খনি বিশেষজ্ঞেরা জানান, মাটির তলায় জমে থাকা কয়লার স্তরে প্রচুর মিথেন গ্যাস থাকে। তা বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগুন ধরে যাচ্ছে। তা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে। ফলে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে রসুনপুর, শ্যামাপুর, আমুলিয়া, কাশিডাঙা, সন্নাসী, শিরিষডাঙা, খয়েরবনি, জামজুড়ি, বেগুনিয়া কেলপাড়া ও ভুঁইয়াপাড়া এলাকায়। বাসিন্দারা জানান, সারাক্ষণই ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে এলাকা। পুকুর-জলাশয়ে কালো আস্তরণ পড়ে যায়। সামান্য সময় আঢাকা রাখলে ভাতের রঙ কালো হয়ে যায়। গাছের পাতা ধূসর বা কালো হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শক্তিপদ মাজি বলেন, ‘‘চোখ জ্বালা করে। গ্যাসের কটূ গন্ধে মাথা ঝিমঝিম করে।’’ একই অভিযোগ হাজার পাঁচেক বাসিন্দার।

রসুনপুর জঙ্গলে বহু গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝেই মাটিতে বিশাল ফাটল তৈরি হয়। ভেঙে যায় বিদ্যুতের খুঁটি ও জলের পাইপলাইন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পরিষেবা। এলাকার বাসিন্দা তথা জামগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জিত বাউড়ি বলেন, ‘‘এই এলাকাগুলির বাসিন্দারা ধস-ধোঁয়া-আগুনের আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য হন। মাথার উপরে বিপদ বুঝেও কোথাও যেতে চান না। আমরা স্থানীয় ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে বহু বার বালি ভরাটের আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।’’

ধসের আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে পাঁচগাছিয়ার মনোহরবহালের বাসিন্দাদেরও। বাড়ির দেওয়াল, মেঝেতে বড়-বড় ফাটল। বিশেষজ্ঞদের মতে, খনি বেসরকারি হাতে থাকার সময়ে এই এলাকায় একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন খনি ছিল। মালিকেরা মাটির তলার কয়লা তুলে নিয়ে ফাঁকা অংশে বালি ভরাট করেননি। ফলে, ধস এখন নিত্যসঙ্গী। এলাকায় পরপর কয়েকটি ধসের ঘটনায় কমপক্ষে ১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্দোলন করেছে তৃণমূল। স্থানীয় নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় অভিযোগ করেন, সব জেনেও চুপ করে আছে প্রশাসন। খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া ছাড়া সমাধানের আর বিশেষ কোনও রাস্তা নেই। স্থানীয় বাসিন্দা রামতনু দাস বলেন, ‘‘২০১২ সালে প্রশাসনের তরফে এলাকা পরিদর্শনের পরে পুনর্বাসন প্রাপকদের একটি করে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আর কাজ এগোয়নি।’’ প্রশাসনের অবশ্য দাবি, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে।

যত দিন তা না হচ্ছে, আতঙ্কে দিনযাপনই ভবিতব্য বাসিন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barwani amar sohor sushanta banik landslide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE