Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Saraswati Puja

সরস্বতী পুজো করবে তিন ছাত্রী

বিদিশা সাহা, প্রিয়াঙ্কা গোপ এবং বর্ষা দাস পড়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে। কিছু দিন আগে তারা নিজেরাই স্কুলের মাস্টারমশাইদের কাছে পুজো করার ইচ্ছার কথা জানায়।

পুজোর রীতিনীতি শেখা। নিজস্ব চিত্র

পুজোর রীতিনীতি শেখা। নিজস্ব চিত্র

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

ছক-ভাঙাটা পারিবারিক অনুষ্ঠানের পরিসরে আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর পরিসরেও পৌরোহিত্যের মতো কাজে এগিয়ে এল ছাত্রীরা। দুর্গাপুরের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের তিন ছাত্রী এ বার স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পৌরোহিত্য করবে। পাশাপাশি, পুজোর যাবতীয় আয়োজনেও রয়েছে ছাত্রীরাই।

বিদিশা সাহা, প্রিয়াঙ্কা গোপ এবং বর্ষা দাস পড়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে। কিছু দিন আগে তারা নিজেরাই স্কুলের মাস্টারমশাইদের কাছে পুজো করার ইচ্ছার কথা জানায়। আপত্তি জানাননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক-সহ অন্য শিক্ষকেরা। কিন্তু কেন এমন ইচ্ছে? বর্ষাদের কথায়, ‘‘প্রতি বছর পুজো কাছ থেকে দেখি। বাড়িতে মা, ঠাকুমাদের পুজো করাটাও দেখেছি। ভাবলাম, আমরাও পারব।’’

স্কুলের ‘ছাড়পত্র’ মেলার পরে তিন জনে যায় ফুলঝোড়ের বাসিন্দা পেশায় বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক তথা পুরোহিত কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। কল্যাণবাবু জানান, সংস্কৃত মন্ত্রের উচ্চারণ, অর্থ, পুজোর রীতি-নীতি সবই হাতে ধরে শেখানো হচ্ছে ওই তিন জনকে। তাঁর দাবি, ‘‘খুব ভাল ছাত্রী ওরা। দ্রুত শিখছে।’’ ছাত্রীদের এগিয়ে আসতে দেখে খুশি শিক্ষিকা দেবশ্রী সাহা, মিতা সরকার প্রমুখেরাও।

পৌরোহিত্যের কাজে মেয়েদের বসাটা আপাত ভাবে নতুন হলেও, এর ঐতিহ্য কিন্তু দীর্ঘদিনের। এক সাক্ষাৎকারে সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা নরেন্দ্র দেব মারা যাওয়ার পরে পৌরোহিত্যের দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম করার জন্য নবনীতাকেই বলেন সুনীতিবাবু। কিন্তু সুনীতিকুমারের মুখে মন্ত্রোচ্চারণ শুনে নবনীতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি একেই অব্রাহ্মণ, তায় নারী— কিন্তু এ যে গায়ত্রী!’’ সঙ্গে সঙ্গে আচার্যের বক্তব্য, ‘‘যে মানুষ বেদ উপনিষদ পড়েছে, মন্ত্রের মানে যে বোঝে, যার জীবনধর্ম হচ্ছে অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা— তাকে গায়ত্রী পড়াব না?’’ বেশ কয়েক বছর আগে নিজস্ব রীতিতে বিয়ে-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্যের কাজ শুরু করেন নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর দল। সম্প্রতি মালদহের হবিবপুরে বৈষম্য মুছতে সরস্বতী পুজোয় এক আদিবাসী ছাত্রীর পৌরোহিত্য করার কথাও সামনে আসে। এ প্রসঙ্গে নন্দিনীদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিষয়টিকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাচ্ছি। পৌরোহিত্যের মতো কাজেও মেয়েরা থাকবেন, এটা তো অনেক দিন আগেই হওয়ার কথা ছিল। এটাই স্বাভাবিক।’’

এই স্কুলের ৮৬৩ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৪৯১ জন ছাত্রী। পৌরোহিত্যের পাশাপাশি, স্কুল চত্বর সাফ, আলপনা দেওয়া, মামরা বাজারে প্রতিমার বরাত দেওয়া, আনাজ বাজার করা, দধিকর্মার ভোগ বিতরণ-সহ পুজোর যাবতীয় খুঁটিনাটি দায়িত্বে রয়েছে স্কুলের ছাত্রীরাই। মেয়েদের এই কাজকে সমর্থন জানিয়েছেন তাঁদের অভিভাবক ও বন্ধুরাও। স্কুলের ছাত্র বিক্রম রুইদাস, মণিরুল ইসলাম, সৌরভ বাগদিরা বলে, ‘‘প্রতি বছর আমরা সবাই মিলেই পুজোর কাজ করি। এ বার আমাদের বান্ধবী, দিদিরাই সব দায়িত্ব নিয়েছে। ওদের পাশে সব সময় থাকছি।’’

প্রধান শিক্ষকও বলেন, ‘‘সমাজের সব ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে আসছে। আমাদের ছাত্রীরা সেই এগিয়ে যাওয়ারই প্রতীক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja Student Priest Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE