Advertisement
E-Paper

অপেক্ষা সার, বাসের দেখা নেই

জেলা জুড়ে কার্যত অঘোষিত ধর্মঘটের চেহারা নিল পথঘাট, দাবি যাত্রীদের। দোকান খোলা থাকলেও বিকিকিনি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৯
বর্ধমানের তেলিপুকুর এলাকায় মালবাহী গাড়িতে চড়ে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমানের তেলিপুকুর এলাকায় মালবাহী গাড়িতে চড়ে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় বাস মিলবে, সেই আন্দাজ মিলেছিল গত দু’দিনের অভিজ্ঞতা থেকেই। শনিবার দু’একটি ছাড়া সব বাসেরই গন্তব্যস্থল ছিল ব্রিগেড। ফলে, টোটো-মালবাহী গাড়িতেই ভরসা করতে হল যাত্রীদের। কিন্তু সেই সব যানবাহনও অন্য দিনের তুলনায় রাস্তায় নামল কম। ফলে, জেলা জুড়ে কার্যত অঘোষিত ধর্মঘটের চেহারা নিল পথঘাট, দাবি যাত্রীদের। দোকান খোলা থাকলেও বিকিকিনি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

বর্ধমান শহর

শহরে দু’টি বাসস্ট্যান্ড, উল্লাস ও নবাবহাটে। উল্লাসে দু’টি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কোনও যাত্রী ছিল না। বাসস্ট্যান্ডের বাইরে অন্য দিনের মতো টোটোর জটও ছিল না। তবে নবাবহাটে দূরপাল্লার বাস দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু, যাত্রীর অভাবে বাস রাস্তায় নামবে কি না, সে নিয়ে চিন্তায় পড়েন চালকেরা। নবদ্বীপ-বরাকর রুটের বাস চালক তাপস দাস বলেন, “এলাম বটে। কিন্তু গোটা বাসে ৫-৬ জন যাত্রী। বাস নিয়ে আর ফিরব না।’’ ওই বাসস্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বর্ধমান শহরের কাঁটাপুকুরের শিবানী রুদ্র। গলসির শিল্যাঘাট যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “বিয়েবাড়ি যেতে হবে বলে বেরিয়েছি। তিন ঘণ্টা হয়ে গেল। এখনও কিছু পেলাম না। কী করব, বুঝতে পারছি না!’’

কাটোয়া

প্রতিদিন কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন রুটের ১৫০-১৬০টি বাস চলে। কিন্তু এ দিন চলেছে মাত্র ৪৫টি। যাত্রীর ভিড়ও ছিল কম। কলকাতা, আসানসোল ও দুর্গাপুর— এই তিন রুটে পাঁচটি সরকারি বাস এ দিন নিয়মমাফিক চলেছে। দুপুর ১২টা নাগাদ আসানসোলগামী বাসকে যাত্রী তুলতে কিছু লোক বাধা দেয় বলে অভিযোগ চালকের। তবে খানিকক্ষণের মধ্যে সমস্যা মিটে যায়। বর্ধমানের যাত্রী মৌমিতা নাগ, মেমারির পৌষালী লাহারা বলেন, ‘‘বাস পেতে সমস্যা হবে জেনেই তাড়াতাড়ি বেরিয়েছি। বেশি খরচ হল রাস্তায়।’’ সকালে স্টেশনবাজার ও নিচুবাজারে বিক্রেতার সংখ্যাও ছিল কম।

কালনা

শাসকদলের একটি সূত্রের খবর, ব্রিগেডের সভায় যাওয়ার জন্য বেশিরভাগ বাস ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়েছিল মাসখানেক আগেই। তাই এ দিন কালনা বাসস্ট্যান্ড থেকে চলাচল করেছে নামমাত্র কয়েকটি বাস। পাণ্ডুয়া, বর্ধমান, বৈঁচি, মেমারি রুটের যাত্রীরা নাজেহাল হয়েছেন। অনেকেই টোটো, অটোয় বাড়তি অর্থ টাকা দিয়ে গন্তব্যস্থলে গিয়েছেন। বাসস্ট্যান্ডে মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন শেফালি বাগ। তিনি বলেন, ‘‘বৈঁচি যাওয়ার বাস সকাল থেকে পাচ্ছি না। কী ভাবে যাব জানি না।’’ বাসস্ট্যান্ডে যাঁরা মাইকে কোন রুটে কোন বাস ছাড়ছে জানান, এ দিন দেখা মেলেনি তাঁদেরও।

রায়না-জামালপুর-খণ্ডঘোষ

মঙ্গলবার ভোর থেকে রাস্তায় যাত্রী নামিয়ে বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল রায়না, মাধবডিহি, জামালপুর ও খণ্ডঘোষে। গত চার দিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন এই সব এলাকার যাত্রীরা। শনিবার জামালপুর বাসস্ট্যান্ড ছিল খাঁ-খাঁ। বাঁকুড়া মোড় সব সময় জমজমাট থাকে। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তায় থাকে পুলিশও। সেই এলাকা এ দিন শান্ত ছিল। গোটা কয়েক মালবাহী গাড়ি ও টোটোই ছিল যাত্রীদের ভরসা। তবে সে জন্য দু’ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে অভিযোগ। আসমিনা বিবি নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘খণ্ডঘোষের বেরুগ্রামে যাওয়ার জন্য দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। কোনও গাড়ি পাচ্ছি না।’’ কিছুটা এগিয়ে সগড়াই মোড়। সেখানে দেখা যায়, মোটরভ্যানেই যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। অনেকে স্কুলভ্যানে চড়েও রওনা দিয়েছেন। তবে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাদুলিয়া মোড়ে সরকারি বাসের দেখা মিলেছে।

গলসি-ভাতার-গুসকরা

অন্য দিন যেখানে দ্রুত গতিতে পরপর গাড়ি ছুটে যায়, সেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেও বাসের দেখা নেই। ফলে, যাত্রীর ভিড় ট্রেনে। গলসির বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পাশেই বাস মেলে। তাই ট্রেনের উপরে নির্ভর করতে হয় না তাঁদের। কিন্তু শনিবার কোনও বাস না থাকায় ট্রেনই ছিল ভরসা। গলসির খানা জংশন থেকে পারাজ পর্যন্ত সব স্টেশনেই ভাল ভিড় ছিল। গুসকরা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে ৮০-৮৫টি বাস ছাড়ে। এ দিন একটি বাসও রাস্তায় নামেনি। দু’একটি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যগুলি ব্রিগেডে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দাবি, যে বাসগুলি রয়েছে, তাঁদের চালক ও খালাসিরাও সভায় গিয়েছেন। তাই বাস চলেনি। নিত্যযাত্রী সোমাশ্রী মজুমদার, অভিজিৎ পালদের কথায়, ‘‘ভ্যানো বা টোটো চলছে। কিন্তু গন্তব্যস্থল দূরে হলেই তারা যেতে চাইছে না।’’ বর্ধমান-কাটোয়া, বাদশাহী রোড-সহ নানা রুটে অহরহ বাস চলে। এ দিন তা ছিল না।

যেমন খুশি ভাড়া

বাস না থাকার সুযোগে ‘যেমন খুশি’ ভাড়া চেয়েছেন টোটো, মালবাহী গাড়ি ও ভ্যানোর চালকেরা, অভিযোগ যাত্রীদের। বর্ধমানের তেলিপুকুরে শেখ রফিক বলেন, ‘‘অন্য দিন মাল বহন করি। আজ সকাল থেকে যাত্রী বহন করছি। ভালই রোজগার হচ্ছে।’’ আর এক চালক বিনোদ সিংহের কথায়, ‘‘অন্য দিন গাড়ি চালাই না। আজ গাড়ি ভাড়া করে লোক তুলছি। দিনের শেষে ভাল টাকাই পকেটে আসবে মনে হচ্ছে।’’ বাসে যে রাস্তার জন্য ভাড়া ১৮-২২ টাকা, শনিবার মালবাহী গাড়িতে সেই রাস্তা যেতে দিতে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। ৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে টোটোয় লাগে ১০ টাকা। এ দিন সেটাই ৩০ থেকে ৬০ টাকা অবধিও ছুঁয়েছে বলে অভিযোগ। গলসির টোটো চালক জগাই আঁকুড়ে বলেন, ‘‘অন্য দিন ৩০০ টাকা রোজগার হয়। আজ হাজার দেড়েক হবে।’’ কুশল কর্মকার, রঞ্জন ধরদের কথায়, “অনেকে দরাদরি করলেও সেই টোটোতেই উঠছেন।’’

TMC brigade Kolkata rally TMC rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy