Advertisement
E-Paper

ভোট ভাগের হিসেবই ভরসা তৃণমূলের

হিসেব ওলোটপালট করে দিয়ে গিয়েছিল একটা ভোট। তার পরে আরও একটা নির্বাচন গিয়েছে। অঙ্কও অনেকটা পাল্টেছে। কিন্তু আগের সেই ভোটের স্মৃতি আসানসোল উত্তর কেন্দ্রে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না শাসক দলকে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:২১

হিসেব ওলোটপালট করে দিয়ে গিয়েছিল একটা ভোট। তার পরে আরও একটা নির্বাচন গিয়েছে। অঙ্কও অনেকটা পাল্টেছে। কিন্তু আগের সেই ভোটের স্মৃতি আসানসোল উত্তর কেন্দ্রে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না শাসক দলকে।

২০১১ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে জন্ম হয় এই আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের। সে বার বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জেতে তৃণমূল। কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী মলয় ঘটক সিপিএমের রানু রায়চৌধুরীকে হারিয়ে দেন প্রায় ৪৮ হাজার ভোটে। বিজেপি পেয়েছিল হাজার সাতেক ভোট। কিন্তু তিন বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় এই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের দোলা সেনের থেকে প্রায় পঁচিশ হাজার ভোট বেশি পান। আসানসোল লোকসভা আসন থেকে বাবুল সুপ্রিয় জেতেন ষাট হাজারেরও বেশি ভোটে।

সেই হার নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জলঘোলা হয়েছিল বিস্তর। সেই ভোটের বছরখানেক পরে গত অক্টোবরে আসানসোল পুরভোটে অবশ্য জমি ফিরে পায় তৃণমূল। পুরনিগমের ৩২টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই কেন্দ্র। পুরভোটে ২১টি ওয়ার্ডে জেতে তৃণমূল। ছ’টি যায় বিজেপির দখলে, পাঁচটি সিপিএমের। লোকসভা ভোটে বিজেপির যে আধিপত্য ছিল, পুরভোটে তা আর দেখা যায়নি। তবে এই কেন্দ্রের অনেক ওয়ার্ডেই ভাল ভোট পায় তারা। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিরোধী ভোট ভাগের সুবাদে সুবিধে হয়ে যায় তৃণমূলের।

১৯৫২ সালের পরে এই প্রথম এই এলাকায় প্রার্থী দিল না বামেরা। আসন সমঝোতায় আসানসোল উত্তর কেন্দ্রটি পেয়েছে কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্রে বিধানসভা ভোট হয়েছে ১৫ বার। তার মধ্যে ন’বার জিতেছে বামেরা, চার বার কংগ্রেস ও দু’বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। প্রথম বিধানসভা ভোটে এখানে জিতেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অচিন্দ্রনাথ বসু। ১৯৫৭ সালে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী শিবদাস ঘটক। ২০০১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে জয়ী হন। গত বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হয়। এ বার অবশ্য কংগ্রেস গাঁটছড়া বেঁধেছে সঙ্গে বামেদের। কংগ্রেসে প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারেও নেমেছেন বাম নেতা-কর্মীরা।

পুরভোটে শাসকদল বিরোধী ভোট বাম ও বিজেপির মধ্যে ভাগাভাগির ফলে নানা ওয়ার্ডে যে ভাবে দলের প্রার্থীরা সুবিধে পেয়েছিলেন, এ বারও তেমনটাই হবে বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এই অঙ্ক তাঁদের খানিক স্বস্তি দিলেও কপালে ভাঁজ ফেলছে অন্য কয়েকটি বিষয়। তৃণমূলের একাংশের আশঙ্কা, বিজেপির ঝুলি থেকে কিছু ভোট যদি বাম-কংগ্রেসের ঘরে যায় সেক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হতে পারে। আবার, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও আর এক মাথাব্যথা। এই এলাকায় দলের কর্মীদের কোন্দল বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, বেশির ভাগেরই মূলে সিন্ডিকেট নিয়ে বিবাদ। দলের এক জেলা নেতার বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষের কাছে এই সব ঘটনা মোটেই ভাল বার্তা দেয়নি।’’

সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীও বলছেন, ‘‘প্রচারে আমরা রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি আসানসোলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথাও ভোটারদের মনে করিয়ে দেব।’’ কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ বার মানুষ আমাদেরই বেছে নেবেন।’’ বিজেপি প্রার্থী নির্মল কর্মকার অবশ্য জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত। তাঁর যুক্তি, ‘‘লোকসভায় মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছিলেন। পুরভোটে সন্ত্রাস করে জিতেছে তৃণমূল। এ বার আমাদের ফল আরও ভাল হবে। কারণ, মানুষ গত পাঁচ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।’’

রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী তথা এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটক অবশ্য এ সব আমল দিচ্ছেন না। আইটি হাব, বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা থানা, জেলা আদালত, জেলা হাসপাতাল, শ্রম ভবন, বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র থেকে যুব আবাস— তাঁদের সরকারের আমলে আসানসোলে এত রকমের উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ উন্নয়ন দেখেন। গত পাঁচ বছরে আসানসোলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেই আমরা ভোটারদের আশীর্বাদ পাব।’’

tmc vote share election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy