Advertisement
২৬ মে ২০২৪

পঞ্চায়েতে টাকা নয়ছয়, বিক্ষোভ

তৃণমূল নেতাদের মদতে পঞ্চায়েতে লুঠ চলছে অভিযোগ তুলে প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার বিক্ষোভও দেখালেন তাঁরা।ভাতারের আমারুন ২ পঞ্চায়েতে প্রায় তিনশো জন গ্রামবাসী দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিন বিক্ষোভ দেখান।

কুবাজপুর থেকে ভাতার যাওয়ার এই রাস্তা নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি বলে অভিযোগ।নিজস্ব চিত্র।

কুবাজপুর থেকে ভাতার যাওয়ার এই রাস্তা নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি বলে অভিযোগ।নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

তৃণমূল নেতাদের মদতে পঞ্চায়েতে লুঠ চলছে অভিযোগ তুলে প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার বিক্ষোভও দেখালেন তাঁরা।

ভাতারের আমারুন ২ পঞ্চায়েতে প্রায় তিনশো জন গ্রামবাসী দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিন বিক্ষোভ দেখান। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা থেকে পঞ্চায়েতের কর্তারা দুর্নীতির কোনও অভিযোগ মানতে নারাজ।

সম্প্রতি ‘আমারুন ২-এর সকল জনগণ’ নামে একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয় গ্রামবাসীদের একাংশের তরফে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘পঞ্চায়েতে লুঠ-রাজ চলছে। এর পিছনে অশোকের, মানু ও পরেশের সমর্থন আছে, দোয়া আছে।’ জানা গিয়েছে, অশোক হলেন ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আর মানু আসলে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারী। প্রচারপত্রের অভিযোগ অনুযায়ী, ঢালাই রাস্তা, মোরাম, গাছ বিক্রি-সহ এক কোটি ৫৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লুঠ হয়েছে। কী ভাবে লুঠ হল, তারও ব্যাখা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় বিজয়পুর থেকে খেঁড়ুর কিংবা খেঁড়ুর থেকে নদীপাড়-সহ বিভিন্ন গ্রামের ঢালাই রাস্তা নিম্ন মানের তৈরি করেছে পঞ্চায়েত। ওই রাস্তার নামে ১৬ লক্ষ টাকা, আবার পলশোনা, খেঁড়ুর গ্রামে মোরাম রাস্তা তৈরির নামে ৬২ লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছে পঞ্চায়েত। পলশোনা গ্রামের গোলাম শেখ, ভোলা শেখ, কুবাজপুরের তন্ময় ঘোষদের অভিযোগ, “গাছ বিক্রির নামেও লুঠ হয়েছে। গোটা পঞ্চায়েতটাই দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে।” বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, বিজয়পুর, পলশোনা, উচ্চপুর গ্রামের রাস্তায় ১৫ বছর আগে শাল-সেগুন সহ নানা রকম গাছ লাগানো হয়েছিল। মাস তিনেক আগে সেই সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ পঞ্চায়েতের কাছে গাছ বিক্রির সঠিক হিসেব নেই। কুবাজপুর-যাদবপুর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেতা নিশীথ ঘোষের দাবি, “ওই গাছ লাগানোর সময় চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে, সেই মতো পঞ্চায়েতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, গাছ বিক্রির ৬০ শতাংশ টাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পাবে।” কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলেও তাঁদের দাবি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ১০ হাজার ৬০০ গাছ বিক্রি করে ৫০ লক্ষ টাকা পঞ্চায়েতের ঘরে ঢোকা উচিত ছিল।

আমারুন ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অশোক রায় অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর কথায়, “আনুমানিক চার হাজার গাছ বিক্রি করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ১১ লক্ষ টাকা রয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি সঠিক নথি দেখাতে পারলে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।”

বিক্ষোভকারীদের আরও অভিযোগ, জল নিকাশির জন্য হিউম পাইপ লাগানোর নামে ৫ লক্ষ টাকা, নিকাশি নালা তৈরির নামে ১৭ লক্ষ টাকা, দরপত্র না ডেকে ৩৩ লক্ষ টাকা এবং ধানে বীজ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লুঠ করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, “আমরা পঞ্চায়েতের লুঠ নিয়ে সরব হওয়ার পরে বিধায়ককে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। উনি দুর্নীতির প্রতিবাদ করার জন্যই আমাদের বলেছেন।”

যদিও পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বলেন, “কে বা কারা দু’টাকা দিয়ে প্রচারপত্র ছাপিয়েছে, তার জবাব দেব না। আমার পঞ্চায়েতে কোনও দুর্নীতি নেই।” পঞ্চায়েতে দুর্নীতিতে ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে নাম উঠে আসা মানগোবিন্দ অধিকারীর কথায়, “আমি ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ছিলাম, সে জন্য নাম জড়িয়ে দিয়েছে। সব বাজে অভিযোগ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC panchayat Money Road construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE