হাজির: কালনা আদালত চত্বরে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা। কিন্তু তাতে যাতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা দুর্ভোগে না পড়েন, সে জন্য আসরে নামল শাসকদল। তবে তাতে সরকারি আইনজীবীদের বেশির ভাগ জন কাজে যোগ দিলেও অচলাবস্থা কাটেনি এ দিন।
এক আইনজীবীকে অপহরণের মামলায় প্রথমে অভিযোগ নিতে অনীহা, পরে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছেন কালনার আইনজীবীরা। কিন্তু তাতে ফল হয়নি দাবি করে কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দলের তরফে সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেওয়া হয়, কর্মবিরতি চলতে থাকলে মামলা-মোকদ্দমার কাজে এসে বিপাকে পড়বেন সাধারন মানুষ। তাই তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগ দিতে হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, সরকারি আইনজীবীরা কেউ-কেউ খারাপ পরিস্থিতির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, আদালত চত্বরে পরিস্থিতি দেখতে থাকবেন দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ আদালতে চত্বরে দেখা যায় কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ, নাদনঘাটের রাজকুমার পাণ্ডে, বেগপুরের ইনসান মল্লিক, সুলতানপুরের প্রধান সুকুর শেখ-সহ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীকে। তাঁরা কয়েকজন সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবীর (এপিপি) সঙ্গে কথাও বলেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ওই আইনজীবীদের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া অনুচিত। কালনা আদালতে এমন আইনজীবীর সংখ্যা ১৫। তার মধ্যে ১২ জন কাজে যোগ দিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, যে সরকারি আইনজীবীরা এ দিন কাজে আসেননি তাঁদের সরকারি প্যানেল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানাবেন তাঁরা।
এ দিন কাজে যোগ দেওয়া সরকারি প্যানেলভুক্ত আইনজীবী আজিজ শেখ অবশ্য বলেন, ‘‘এক আইনজীবীর সঙ্গে যা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাওয়া দরকার। তবে লাগাতার কর্মবিরতিতে আমার সায় নেই।’’ তাহলে সোমবার বার অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে কর্মবিরতির পক্ষে সই করলেন কেন? বর্ষীয়ান এই আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘ভেবেছিলাম হাজিরার জন্য সই করা হয়েছে।’’
যদিও এ দিন আদালতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বার অ্যাসোসিয়েশনের বাকি সদস্যেরা কোনও কাজ করেননি। কাজে যোগ দেননি ল-ক্লার্করাও। নিয়ম অনুযায়ী, অভিযুক্তেরা নিজেরা জামিনের আবেদন করতে পারেন। এ দিন চার জন জামিনের আবেদন জানালে তা মঞ্জুরও হয়। তবে তাঁদের পক্ষে কোনও জামিনদার না থাকায় তাঁরা ছাড়া পাননি। কাজ না করলেও অনেক আইনজীবীকেই এ দিন আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাঁদের ক্ষোভ, বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তে আগে কখনও শাসকদলকে এ ভাবে মাথা গলাতে দেখা যায়নি। কর্মবিরতিতে তাঁদের পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরা হবে না বলে তাঁদের দাবি।
যদিও আইনজীবীদের কাজে যোগ দেওয়ানোর ক্ষেত্রে দলের হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করেনি জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আইনজীবীদের কিছু দাবিদাওয়া থাকতে পারে। তা নির্দিষ্ট ফোরামে আলোচনা করা যাবে। কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এ দিন দলের কর্মীরা নিজেদের কাজকর্মে গিয়ে থাকতে পারেন, আদালত চালু রাখতে নয়। এ ব্যাপারে দলের তরফে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy