Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদ করেই খুন বাবা

বৃহস্পতিবার রাতে খণ্ডঘোষের উখরিদ গ্রামে এলোপাথারি ছুরির ঘায়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী পরেশ বাগদিকে। জখম হন তাঁর সঙ্গে থাকা ওই গ্রামেরই ফুলচাঁদ শেখ, জামাত আলি ও শেখ হারা। লোকজন জড়ো হয়ে অভিযুক্তদের তাড়া করে। মার খেয়ে মুক্ত শেখ নামে দলেরই এক কর্মী পুকুরে ঝাঁপ দেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৩
শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে ফিরে বিকেল চারটের সময় ভাত খেতে বসেছিলেন তিনি। ফোন আসতেই ভাত মাখা হাতে উঠে যান। সাইকেল নিয়ে বেরনোর সময় মাকে বলেন, ‘প্রধানের লোকেরা হামলা চালাচ্ছে। কী হয়েছে দেখে আসছি।’ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেও আর ফেরেনি ছেলে।

বৃহস্পতিবার রাতে খণ্ডঘোষের উখরিদ গ্রামে এলোপাথারি ছুরির ঘায়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী পরেশ বাগদিকে। জখম হন তাঁর সঙ্গে থাকা ওই গ্রামেরই ফুলচাঁদ শেখ, জামাত আলি ও শেখ হারা। লোকজন জড়ো হয়ে অভিযুক্তদের তাড়া করে। মার খেয়ে মুক্ত শেখ নামে দলেরই এক কর্মী পুকুরে ঝাঁপ দেন। পরে পুলিশ বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করান তাঁকে। রাতেই পরেশের স্ত্রী বুদি বাগদি খণ্ডঘোষ থানায় উখরিদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মতিয়ার রহমান ও তাঁর ছেলে হালিম মণ্ডলের নেতৃত্বে ৯ জন তাঁর স্বামীর উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “পুলিশ ঘটনার পরেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হলেন রহমত আলি মণ্ডল, শেখ গোলাম কিবরিয়া ও শেখ আম্বিয়া।

সম্প্রতি কেতুগ্রামের জাহের শেখ, মঙ্গলকোটের ডালিম শেখের খুনেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা সামনে এসেছে। তৃণমূলের বিধায়ক নবীন বাগ থেকে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ পর্যন্ত গোষ্ঠী-রাজনীতি নিয়ে সতর্ক। প্রত্যেকের কথায়, “বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।”

মৃত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও বৃদ্ধা মা গলিদেবী, ছেলে লালন ও অবিবাহিত একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁর আরও দুটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বুদিদেবী বলেন, ‘‘রাজনীতি করতে গিয়ে দলের লোকেরাই প্রাণ কেড়ে নিল স্বামীর।” পরেশবাবু দিন মজুরি করতেন। তাঁর স্ত্রী, মা ও অবিবাহিত মেয়ে স্থানীয় একটি চালকলের শ্রমিক ছিলেন। আর ছেলে লালন এ বছরই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে উখরিদের স্যার রাসবিহারী ঘোষ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। লালনের কথায়, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাবাকে খুন হতে হল। এখন বোনের বিয়েই বা কী করে দেব, নিজের পড়াশোনায় কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। মাথার উপর থেকে ছাদটাই তো সরে গেল!”

পরিজন ও পড়শিরাই জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন পরেশবাবু। সিপিএম আমলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। সেই সময় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন। তৃণমূল আমলেও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজকর্মের প্রতিবাদ করতেন। সে জন্যই তাঁকে খুন হতে হল। তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “দল ওই পরিবারের পাশে রয়েছে। পড়াশোনা-সহ অন্যান্য ব্যাপারে দল যথাসাধ্য সাহায্য করবে।” এ দিন প্রধান মতিয়ারের রহমানের বাড়িতে ডাকাডাকি করেও কেউ সাড়া দেননি।

Murder Paresh Bagdi পরেশ বাগদি TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy