Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Raniganj

কে খুঁজবে পুনর্বাসনের জমি, প্রশ্ন

২০০৫-এ সুপ্রিম কোর্ট কয়লা মন্ত্রককে ধসপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মূলত রানিগঞ্জ কয়লা-অঞ্চলে ২২,৬৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

সোনপুর বাজারিতে কয়লামন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সোনপুর বাজারিতে কয়লামন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী, বিপ্লব ভট্টাচার্য
দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২২
Share: Save:

ধস, ফাটলের জেরে পশ্চিম বর্ধমানে বার বার বিপন্ন হয়েছে জনজীবন। আর তাকে কেন্দ্র করে পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে বার বার কেন্দ্র-রাজ্য তরজা বেধেছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী দাবি করলেন, এই প্রকল্পের জন্য জমি খোঁজার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। যদিও, এই প্রকল্পের ‘নোডাল এজেন্ট’ আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, এ বিষয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।

বৃহস্পতিবার পশ্চিম বর্ধমানে এসে প্রহ্লাদ দাবি করেন, “কোল ইন্ডিয়া বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিপূরণ দেয়। যাঁদের জমি যায় তাঁদের চাকরি, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়। বাড়ির পুনর্বাসনের প্রয়োজন হলে রাজ্য সরকার জমি দেবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এ কথা জানার পরেই তাপসের প্রতিক্রিয়া, “নতুন করে আমরা জমি পাচ্ছি না। যে জমিই দেখা হচ্ছে, ইসিএল দাবি করছে, তার নীচে কয়লা রয়েছে। আমরা ইসিএলের কাছে আর্জি জানিয়েছি, তারাই জমি চিহ্নিত করুক।”

২০০৫-এ সুপ্রিম কোর্ট কয়লা মন্ত্রককে ধসপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার পরে, মূলত রানিগঞ্জ কয়লা-অঞ্চলে ২২,৬৬৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কয়লা মন্ত্রক এ জন্য প্রথমে ২,৬৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। তার মধ্যে ২০০৯-এ কোল ইন্ডিয়া ইসিএলের মাধ্যমে ৫৮১ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়। তা থেকে ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে বারাবনির দাসকেয়ারি, জামুড়িয়ার বিজয়নগর ও অন্ডাল বিমানবন্দর এলাকায় জমি কিনে ১০,১৪৪টি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে। সেগুলির কাজও প্রায় শেষ। এডিডিএ-র অভিযোগ, প্রথম কিস্তির টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কিস্তির টাকা পাঠানো হচ্ছে না। ফলে নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

পাশাপাশি, উঠছে জমি-জটিলতার প্রসঙ্গটিও। এডিডিএ সূত্রে দাবি, রানিগঞ্জ কয়লা-অঞ্চলে যে জমিই চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেখানেই ইসিএল জানাচ্ছে, জমির তলায় কয়লা আছে। আর তার পরে, নির্মাণ কাজের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সে সঙ্গে তাপসের অভিযোগ, “ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ায় পুরো এলাকাতেই মাটির তলায় কয়লা আছে। সেখানে পুনর্বাসনের জন্য বিসিসিএল আপত্তি জানাচ্ছে না। কিন্তু এ রাজ্যে উল্টো ভূমিকা নিচ্ছে ইসিএল।” তাঁর অভিযোগ, এক দিকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে ও অন্য দিকে জমি না ব্যবহার করতে না দিয়ে কেন্দ্র আদতে রাজ্যের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজই করতে দিচ্ছে না।

এ দিকে, ইসিএলের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, কয়লা মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করার পরে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে গেলে, প্রথম কিস্তির টাকা খরচের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হয়। তার পরে, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার আগে নতুন করে বাজারদর অনুযায়ী খরচের সমীক্ষা-রিপোর্ট পাঠাতে হবে। রাজ্য এখনও সে সমীক্ষা-রিপোর্ট পাঠাতে পারেনি। তাই সমস্যা না থাকলেও, টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। সে সঙ্গে, জমি খুঁজে বার করার দায়িত্ব রাজ্যের। সব জমিতে কয়লা থাকলে কী ভাবে এই খনি এলাকায় ব্যক্তিগত মালিকাধীন বাড়ি ও কারখানা নির্মাণ হয়ে চলছে, তা-ও রাজ্যের কাছে খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন ইসিএলের এক আধিকারিক। যদিও, সমীক্ষা-রিপোর্টের বিষয়ে কয়লা মন্ত্রক, কোল ইন্ডিয়া রাজ্যকে মৌখিক ভাবেও জানায়নি, দাবি তাপসের। এই আবহে শুধুমাত্র বিজয়নগরে ১৫৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া গিয়েছে বলে এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে।

এমন চাপানউতোরের মধ্যে আতান্তরে পড়েছেন বাসিন্দারা। পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ায় হতাশ জামুড়িয়ার কেন্দা ও অন্ডালের হরিশপুরের বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, পুরো এলাকাটাই ধসপ্রবণ। ইতিমধ্যেই দু’টি গ্রামে শ’খানেক বাড়িতে ফাটল ধরেছে। বার বার ধসও নেমেছে। তাই, তাঁরা চাইছেন, দ্রুত বিতর্ক মিটিয়েকাজের কাজ হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raniganj Durgapur Coal Mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE