Advertisement
১৯ মে ২০২৪

তালাবন্ধ ঘরে জোড়া দেহ,ধন্দ কুলটিতে

বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল এক প্রৌঢ় ও এক যুবকের মৃতদেহ। পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে সোমবার দরজা ভেঙে পচাগলা দেহ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। দেবাশিস কর্মকার (২৭) নামে ওই যুবক শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

ঘটনাস্থল: কুলটি কলেজ মোড়ের কাছে সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: কুলটি কলেজ মোড়ের কাছে সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হল এক প্রৌঢ় ও এক যুবকের মৃতদেহ। পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে সোমবার দরজা ভেঙে পচাগলা দেহ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। দেবাশিস কর্মকার (২৭) নামে ওই যুবক শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর পরিবার পুলিশকে জানানোর পরেই তল্লাশি শুরু হয়। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৫৭) বাড়িতে দু’জনেরই দেহ মেলে। অতনুবাবুর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। দেবাশিসের মৃত্যুর কারণ জানতে ভিসেরা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়েছে পুলিশ।

কুলটি কলেজ মোড়ে এই জোড়া মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অকৃতদার অতনুবাবু বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁর সঙ্গে পাশের পাড়ার বাসিন্দা দেবাশিসের ঘনিষ্ঠতা ছিল। দেবাশিসের বাবা সনাতন কর্মকার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরোন দেবাশিস। আধ ঘণ্টার মধ্যে ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার সারা দিন না ফেরায় সোমবার সকালে তাঁরা পুলিশের কাছে যান। তাঁর কথামতোই পুলিশ অতনুবাবুর বাড়িতে যায়।

পুলিশ জানায়, বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে ও বাইরে সিমেন্টের চাতালে জমাট রক্তের ছাপ। দরজা ভিতর থেকে তালাবন্ধ। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন অতনুবাবুর ভাই রনি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হলদিয়ায় থাকেন। দুই পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে পুলিশ দরজা ভেঙে ঢোকে। ঘরে দু’টি দেহ পড়েছিল। অতনুবাবুর মাথা থ্যাঁতলানো ছিল, তবে দেবাশিসের দেহে কোন আঘাত মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের ধারণা, অতনুবাবুকে বাইরে খুন করার পরে দেহ ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেহ দু’টি আসানসোল হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।

রনিবাবু পুলিশকে জানান, শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে দাদার শেষ বার ফোনে কথা হয়। তখন দাদার ঘরে কেউ এক জন ছিলেন। রনিবাবু বলেন, ‘‘দাদার সঙ্গে কথার মাঝেই ওই ব্যক্তি সেই ফোনে নিজের নাম রাজা জানিয়ে ও নিজেকে পুলিশকর্মী পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, দাদার বাড়িতে অনৈতিক কাজ হচ্ছে। তাঁকে থানায় নিয়ে যাবে। আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেয়।’’ তার পরে দাদার সঙ্গে ফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

পুলিশের অনুমান, অতনুবাবুকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন দেবাশিস। তাঁর মৃত্যুর কারণ ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ। কিন্তু কেন দেবাশিস এই ঘটনা ঘটাবেন, সে প্রশ্নে ধন্দে তদন্তকারীরা। তবে মৃতদের পরিজনেরা পুলিশের সঙ্গে সহমত নন। তৃতীয় কোনও ব্যক্তি দু’জনকে খুন করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ। রনিবাবু বলেন, ‘‘আমার দাদার সঙ্গে দেবাশিসের পরিবারের ভাল সম্পর্ক বলে জানি।’’ দেবাশিসের বাবা সনাতনবাবুও বলেন, ‘‘অতনুর বাড়ির সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।’’

সনাতনবাবুর দাবি, দেবাশিসের যে ট্যাবে শনিবার রাতে ফোন এসেছিল, ঘটনার পরে সেটি মিলছে না। পুলিশ দেহে আঘাতের চিহ্ন নেই জানালেও দেবাশিসের মাথায় ও নাক-মুখে রক্তের দাগ ছিল, দাবি তাঁর। রনিবাবুর দাবি, অতনুবাবুর মোবাইলও মিলছে না। দুই পরিবারেরই আরও দাবি, দরজায় বাইরে থেকেও তালা দেওয়া ছিল। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি।

পুলিশ জানায়, সমস্ত সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে। এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘অতনুবাবুর দাদার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ তবে দেবাশিসের পরিবার কোনও অভিযোগ করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE