Advertisement
E-Paper

দুই তোলাবাজকে ধরে এসপি-র কাছে ট্রাক মালিকেরা

জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে পুলিশই তোলাবাজি করছে, এই অভিযোগ নিয়ে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে হাজির হলেন ট্রাক মালিক সংগঠনের নেতারা। শুধু মুখের কথাই নয়। শুক্রবার বিকেলে শক্তিগড়ের কাছে রাস্তা থেকে দুই তোলাবাজকে হাতে-নাতে ধরে পুলিশ সুপারের অফিসে নিয়ে যান ট্রাক মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দু’জনেই পুলিশের নিয়োগ করা লোক।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০১:১২
পুলিশ সুপারের অফিসে দুই ধৃত।

পুলিশ সুপারের অফিসে দুই ধৃত।

জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে পুলিশই তোলাবাজি করছে, এই অভিযোগ নিয়ে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে হাজির হলেন ট্রাক মালিক সংগঠনের নেতারা।

শুধু মুখের কথাই নয়। শুক্রবার বিকেলে শক্তিগড়ের কাছে রাস্তা থেকে দুই তোলাবাজকে হাতে-নাতে ধরে পুলিশ সুপারের অফিসে নিয়ে যান ট্রাক মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দু’জনেই পুলিশের নিয়োগ করা লোক। দীনেশ মান্ডি ও দিলীপ পাল নামে ওই দুই যুবকেরই বাড়ি মেমারিতে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে বর্ধমান থানা তাদের গ্রেফতার করেছে। পুলিশ তোলাবাজি বন্ধ না করলে ৬ জুনের পরে রাজ্য জুড়ে ট্রাক ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন ট্রাক মালিকেরা।

এ দিন পুলিশ সুপারের অফিসে আনা হতেই দীনেশ চিৎকার করে দাবি করতে থাকে, মেমারি থানার ‘ডাকবাবু’-র (প্রতিটি থানায় যে পুলিশকর্মী তোলাবাজির দায়িত্বে থাকেন বলে অভিযোগ) নির্দেশেই তারা টাকা তুলছিল। যদিও মেমারি থানার ওসি রাকেশ সিংহ তা উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই দুই যুবক পুলিশের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত, এমন অভিযোগ বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালও মানতে চাননি। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘এই ধরনের অভিযোগে এর আগে দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। থানায় থানায় খবর নেওয়া হচ্ছে।’’

ট্রাক মালিক সংগঠন ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, মাস ছয়েক ধরে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক জুড়ে তোলাবাজি চলছে। কখনও ঠাকুরের ছবি দেওয়া, কখনও ফল বা অন্য কিছুর ছবি বা বিশেষ চিহ্ন দেওয়া কুপনে তারিখ লিখে ২১০০ টাকা করে তোলা হচ্ছে। হুগলির ডানকুনি থেকে বর্ধমানের প্রায় পশ্চিম প্রান্তে জামুড়িয়া পর্যন্ত জাতীয় সড়কের যে কোনও জায়গায় এই কুপন দেখালে তবেই গাড়ি ছাড়ছে পুলিশের লোক। সংগঠনের সভাপতি মহিন্দর সিংহ গিলের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এ ভাবে টোকেন দিয়ে তোলা তুলছে পুলিশ। বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনও লাভ হয়নি। মাসে ২১০০ টাকা না দিলে রেহাই নেই।’’

এই সব কুপনেই চলে তোলাবাজি।

এই নিয়ে অভিযোগ জানাতেই এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ কয়েকটি গাড়িতে কলকাতায় যাচ্ছিলেন ট্রাক মালিক সংগঠনের নেতারা। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বর্ধমানের শক্তিগড় ও পালশিটের মাঝে (‌মেমারি থানার এলাকা) হলদিয়া থেকে আসা ট্রাক থামিয়ে তোলা চাইছিল দু’জন। চালক তা দিতে না চাওয়ায় তাঁকে মারধরও করছিল তারা। প্রবীরবাবুর কথায়, ‘‘ট্রাকটির পিছনেই ছিল আমাদের গাড়ি। আমরা নেমে লোক দু’টিকে চেপে ধরি। পিছনে আমাদের আরও চার-পাঁচটি গাড়ি আসছিল। সেগুলি থেকেও সকলে নেমে এসে ঘিরে ধরায় ওরা আর পালাতে পারেনি। ওদের তুলে নিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে আমরা সোজা বর্ধমানের পুলিশ সুপারের অফিসে চলে যাই।’’

ফেডারেশনের দাবি, রাজ্যে তাদের সংগঠনের প্রায় ৫৫ হাজার ট্রাক মালিক আছেন। তাঁদের তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার ট্রাক চলে এই রাজ্যে। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘তা হলে হিসেব করুন, আমাদের কাছ থেকে কত টাকা আদায় করা হচ্ছে! গত ৫ মে আমরা কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে জমায়েত করেছিলাম। রাজ্যের পরিবহণ সচিব ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কোনও সুরাহা হয়নি। এখন আমরা জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছি।’’ হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের জেলায় এমন কোনও অভিযোগ এখনও শুনিনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ট্রাক চালক ও মালিকদের তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ একাংশ আবার অন্য সুরও গাইছেন। তৃণমূল প্রভাবিত আসানসোল মোটর ট্রান্সপোট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া দাবি করেন, পুলিশের নামে তোলাবাজির খবর তিনি এই প্রথম শুনলেন। রানিগঞ্জ ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি দয়াশঙ্কর রায়ের দাবি, ‘‘এমন ঘটনা এখনও আমাদের সঙ্গে ঘটেনি। আমরা সকলেই হতবাক।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও আমরা এই ধরনের কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে না হলেও পরিবহণ দফতরের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন রাজুবাবুরা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘দিন দশেক আগে মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণ দফতরের কাছে চিঠি দিয়ে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, নিয়ামতপুর-চৌরঙ্গী মোড়ে মোটর ভেহিক্যালসের রামপুর চেক পোস্টের দুই অধিকর্তা মোটরবাইক বাহিনী রেখেছে। ডুবুরডি চেক পোস্ট থেকে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া পর্যন্ত ভিন্‌ রাজ্যের চালকদের থেকে ‘ওভারলোডিং’-এর অছিলায় মোটা টাকার তোলা আদায় করা এদের কাজ। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেব।’’

ছবি: উদিত সিংহ।

extortionists Truck driver national highway asansol durgapur Trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy