‘‘মা-বাবাকে মিলিয়ে দিন স্যর। আমরা আবার এক সঙ্গে থাকতে চাই।’’ থানায় হাজির হয়ে পুলিশের কাছে বলছে যারা, তাদের এক জন পনেরো, অন্য জন তেরো বছরের। দিদি নবম, বোন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। শুক্রবার সকালে দুই বোনের আর্জি শুনে থমকে যান পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা।
দুই বোনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, মাস দেড়েক আগে তাদের মা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বাবা কাছে থাকলেও, মন খারাপ কমছে না দুই বোনের। দু’জনকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠান পুলিশকর্মীরা। পরে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হলে, আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু ছেলেমেয়েদের কথা ভাবা দরকার। দাম্পত্য-সমস্যায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা ওদেরই হয়।’’ এ ক্ষেত্রে আইনানুগ কিছু করা যায় কি না, দেখার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
দম্পতির বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর। বছর বিয়াল্লিশের স্বামী পেশায় দর্জি। নিজের দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, “স্ত্রীর সঙ্গে আমার অশান্তি হয়নি। মাস দেড়েক আগে, আচমকা আমাদের ছেড়ে বাপেরবাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে নিখোঁজ হয়। দিন দুয়েক আগে সেখানে ফিরেছে। বিবাহবিচ্ছেদ চাইছে। কারণ, জানি না। মেয়েদের কথাও ভাবল না!’’ মহিলার দাবি, ‘‘স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। মেয়েদের আমার কাছে রাখতে চেয়েছিলাম। ওরা আসতে চায়নি।’’
বড়দের সম্পর্কের সমীকরণ বুঝতে পারছে না দুই বোন। নবম শ্রেণির ছাত্রীটি বলে, “ঘুম আসে না। সব সময় মায়ের কথা মনে পড়ে। পড়তে ভাল লাগছে না। স্কুলে আমাদের নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কাউকে মনের কথা বলতে পারছি না।’’ প্রতিবেশীরা জানান, রান্না করা, বোনকে দেখা সবই বড় মেয়ের কাঁধে। চোখে জল নিয়ে মেয়েটি বলে, ‘‘বৃহস্পতিবার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের মামাবাড়িতে যেতে বলছে। মা এখানে আর ফিরবে না।’’ তা শুনে মুখ কাঁদোকাঁদো হয় ছোট বোনের।
মনোবিদ ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন, ‘‘অসহায় হয়ে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করাতেই ওই নাবালিকারা থানায় গিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে মিল করাতে বলেছে।’’ দু’বোন যে স্কুলের ছাত্রী সেখানকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “বাচ্চার কাছে বাবা-মার সান্নিধ্য অপরিহার্য। বিশেষত, বয়ঃসন্ধিতে মেয়ের কাছে মায়ের উপস্থিতি জরুরি। বাবা-মা আলাদা থাকলে, সন্তানদের মানসিক সমস্যা হয়। চেষ্টা করব, ওদের দিকে বিশেষ নজর দিতে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)