Advertisement
E-Paper

জ্বরে মৃত্যু দুর্গাপুরে

গোবিন্দের বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। মা সরস্বতীদেবীর সঙ্গে তিনি ভিড়িঙ্গিতে মাসির বাড়িতে থাকতেন। তাঁর পরিজনেরা জানিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকেই জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৮
গোবিন্দ বাগদি।

গোবিন্দ বাগদি।

অজানা জ্বরের প্রকোপ এ বার দুর্গাপুরেও। রবিবার রাতে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে বেনাচিতির ভিড়িঙ্গির বাসিন্দা গোবিন্দ বাগদি (২৩) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তার পরেই পুরসভা নড়েচড়ে বসে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘মশাবাহিত কোনও রোগের কারণে যুবকের মৃত্যু হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। তবু রবিবার থেকেই ওই এলাকায় সাফাই অভিযান শুরু করা হয়েছে।’’ কিন্তু হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অজানা জ্বরে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবিন্দের বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। মা সরস্বতীদেবীর সঙ্গে তিনি ভিড়িঙ্গিতে মাসির বাড়িতে থাকতেন। তাঁর পরিজনেরা জানিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকেই জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রাতে তাঁকে ভর্তি করানো হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। আইসিসিইউতে রাখা হয় তাঁকে। কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অজানা জ্বরে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার কথা উল্লেখ করলেও মৃতের পরিজনদের দাবি, নির্দিষ্ট করে কী জ্বর তা জানাতে হবে। মৃতের ডেঙ্গি হয়েছিল কি না তা স্পষ্ট জনাতে হবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে পরীক্ষার জন্য। রিপোর্ট পেলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ দিকে এক মাত্র ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মা।

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে গত কয়েকদিনে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত কয়েক বছরে দুর্গাপুরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৬ সালে দু’জনের মৃত্যুও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারপরেও পুরসভার তরফে তেমন তৎপরতা নজরে আসেনি বলে শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ। পুরসভা অবশ্য সে অভিযোগ মানেনি।

শুরু সাফাই। নিজস্ব চিত্র

সোমবার সকালে ভিড়িঙ্গিতে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৃতের বাড়ির কাছেই মজে রয়েছে ডোবা। এলাকায় আবর্জনার স্তূপ। পুঁতিগন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দ বাদ্যকর বলেন, ‘‘নিয়মিত সাফাই হয় না। মজে রয়েছে ডোবা।’’ মৃতের আত্মীয় কৃষ্ণা বাগদি বলেন, ‘‘গোবিন্দের মৃত্যুর পরে ডেঙ্গির ভয়ে আতঙ্কিত পাড়ার অনেকেই।’’ ওই বাড়ির পিছনেই থাকেন মনেশ বাগদি। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারের চার জনের জ্বর হয়েছিল। তিন জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। একজন এখনও শোভাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’’

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গোবিন্দের মৃত্যুর পরেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা। স্বাস্থ্যকর্মী ও সাফাইকর্মীরা তৎপর হয়ে ওঠেন। গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের স্তূপ, পচাগলা অন্য সামগ্রী সরানোর কাজ শুরু করেন সাফাইকর্মীরা। নর্দমাগুলিতে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, কীটনাশক স্প্রে করার কাজ শুরু হয়। জমা জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ শুরু করেন। পাড়ার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘‘এ সব কাজ আগে শুরু করলে হয়তো মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না।’’ দেরিতে কেন কাজ শুরু হল? এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাখি তিওয়ারি বলেন, ‘‘শহর জুড়ে সাফাই কাজ চলছে। যেখানে জ্বরের প্রকোপ বেশি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাচ্ছেন।’’

Durgapur Unknown Fever Death Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy