আসানসোলের কাছে দামোদরের পাড়ে বালি কেটে বোঝাই হচ্ছে লরি। নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন অভিযান হলে খানিকটা রাশ পড়ে। কিন্তু তার পরে আবার এক পরিস্থিতি। আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য চলছেই। প্রতি রাতেই কয়েকশো লরিতে পাচার হচ্ছে লরি। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গোটা বিষয়টির সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কিছু কর্মীর যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল মহকুমায় সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত কোনও বালিঘাট নেই। কিন্তু দামোদর লাগোয়া বার্নপুরের ঢাকেশ্বরি, ডিহিকা, কালাঝরিয়া, রানিগঞ্জের তিরাট, মদনপুর নারায়ণকুড়ি, দামালিয়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় রমরম করে চলছে বেশ কিছু বালিঘাট। দিনের যে কোনও সময়ে ওই সব জায়গায় গেলেই দেখা যায়, সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বালি বোঝাই লরি। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আসানসোল মহকুমা আধিকারিক তন্ময় রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমি এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশদে জানিয়েছি।’’
সরকারি অনুমতি ছাড়াই এই সব বালিঘাট চলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দায়িত্ব ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং সেচ দফতরের উপরে। কিন্তু আসানসোলে যেহেতু সেচ দফতরের কোনও কার্যলয় নেই তাই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকেই সে দায়িত্ব নিতে হবে। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, যে সব ব্লকে এই বেআইনি কাজ হচ্ছে সেখানকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে (বিএলএলআর) উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু বাস্তব তাদের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরীর নির্দেশে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বার্নপুর ও রানিগঞ্জের ওই সব এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ বালি বোঝাই লরি পাকড়াও করে। জরিমানাও করা হয়। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে বালি পরিবহণের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযানও চলছে।’’
প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, এই বালি মাফিয়াদের সঙ্গে বিএলএলআর দফতরের কিছু অসাধু কর্মীর আঁতাত রয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, হিরাপুর মোড়, মরিচকোটা, নারায়ণকুড়ি, ঢাকেশ্বরি, তিরাটের একাধিক বালি কারবারি ওই কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে জাল চালান সংগ্রহ করে। রাস্তায় পুলিশ বা পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের তা দেখিয়ে তারা বালি পরিবহণ করে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে বলে ওই কর্তার দাবি।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা জানান, এই অবৈধ বালি বোঝাই লরিগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি বালি তুলে নিয়ে যায়। যা পরিবহণ আইনের বিরোধী। শুধু তাই নয়, বালি নিয়ে অনেক সময়ে এতটাই বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে লরিগুলি যে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা বলেন, ‘‘সম্প্রতি এই রকম একটি অভিযোগ পেয়ে গিয়ে কয়েকটি বালির লরি পাকড়াও করেছি।’’
আসানসোল মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময় রায় শুধু বলেন, ‘‘আমরা অভিযান চালিয়ে বালির লরি ধরতে শুরু করেছি। এই অভিযান চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy