Advertisement
E-Paper

বই ভালবেসে দশে ওরা চার

ওই স্কুলেরই ছাত্রী অয়ন্তিকা মাজি। ৬৮৩ পেয়ে রাজ্যে অষ্টম হয়েছে সে। সেও ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘দু’জনেই বুদ্ধিমতী, পরিশ্রমী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:০৩
রাজ্যে ষষ্ঠ সাহিত্যিকা ঘোষ। (ডান দিকে) মেধাতালিকায় অষ্টম অয়ন্তিকা মাজি।

রাজ্যে ষষ্ঠ সাহিত্যিকা ঘোষ। (ডান দিকে) মেধাতালিকায় অষ্টম অয়ন্তিকা মাজি।

পড়ার মাঝে ফাঁক পেলেই গোয়েন্দা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়া অভ্যাস। খাটের চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ফেলুদা, শার্লক হোমস, অগাথা ক্রিস্টি। গোয়েন্দা গল্পের চরিত্রদের সঙ্গে নিজেকে মেলাতেও ভালবাসে মেয়েটি। পছন্দ বিভূতিভূষণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার রায়ের লেখাও। সাহিত্যের অনুরাগী ছাত্রীটিই এ বার মাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে রাজ্যে। তবে পেশা হিসেবে বর্ধমান বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের সাহিত্যিকা ঘোষের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া।

ওই স্কুলেরই ছাত্রী অয়ন্তিকা মাজি। ৬৮৩ পেয়ে রাজ্যে অষ্টম হয়েছে সে। সেও ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘দু’জনেই বুদ্ধিমতী, পরিশ্রমী। আমরা জানতাম, দু’জনেই ভাল ফল করবে।’’ স্কুল সূত্রে জানা যায়, অয়ন্তিকা ও সাহিত্যিকা সব পরীক্ষাতেই একে অন্যকে টক্কর দিত। প্রশ্ন করে শিক্ষিকাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলত অয়ন্তিকা। শান্ত হয়ে চুপ করে বসে থাকত সাহিত্যিকা।

৬৮৫ পাওয়া সাহিত্যিকার দাদা সাহিত্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাঁদের বাবা শক্তিপদবাবু চন্দননগর টাউন হাইস্কুলের শিক্ষক। মঙ্গলবার বেড়-ভূতগোড়িয়া পাড় এলাকার বাড়িতে বসে তিনি বলেন, ‘‘ছেলের ব্যাপারে খুব আশাবাদী ছিলাম। আমার সেই স্বপ্ন মেয়ে পূরণ করে দিয়েছে।’’ সাহিত্যিকার মা পার্বতীদেবী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। ফলের পিছনে মায়ের কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি, দাবি সাহিত্যিকার। সে দাবি, “আমার পড়ার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। যখন ভাল লাগত তখনই পড়তে বসতাম। গান শুনতেও খুব ভালবাসি।’’

বই-পাগল অয়ন্তিকার নেশা নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া। পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, অয়ন্তিকার বাবা অসিতবাবু বলেন, “পৃথিবী রসাতলে গেলেও মেয়েকে আধঘন্টা সংবাদপত্র পড়তে দিতেই হবে।’’ আর মেয়ে বলে, “সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি থেকে অনেক দূরে থাকি আমি।’’ বড়নীলপুরের ইটভাটা রোডের বাসিন্দা অয়ন্তিকার মা কুহেলি নন্দী একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমে আমার মেয়ের ছবি দেখাবে, এটা আমার স্বপ্ন। আজ রেজাল্ট দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম।’’

অষ্টম স্থানে রয়েছে কাটোয়ার পুষ্কর ঘোষও। কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের ছাত্র পুষ্করের বাড়ি কাটোয়ার দুর্গাপল্লিতে। স্কুলের পরে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলা তার চাই-ই। পুষ্করের বাবা সুকুমার ঘোষ একটি প্রিন্টিং প্রেস চালান। মা শম্পা দেবী বলেন, ‘‘ছেলে এত ভালো নম্বর পাবে ভাবতে পারিনি।’’ মায়ের হাতে চিলি চিকেন এবং ফ্রাইড রাইস প্রিয় পুষ্করের। ওই ছাত্রের দাদু বিনয়গোপাল ঘোষ জানান, নাতি বেশিক্ষণ পড়তো না। তবে যেটুকু পড়ত, মন দিয়ে পড়ত। পুষ্করের পাড়ার বন্ধু রুপম যশ, সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলে, ‘‘পুজো বা যে কোনও অনুষ্ঠান হোক নাচ করে মাতিয়ে রাখে পুষ্কর।’’ ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষক বিশ্বজিৎ নস্কর জানান, স্কুল থেকে এই প্রথম বাংলায় ৯৮ পেল কেউ। তবে পুষ্করের প্রিয় বিষয় গণিত। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে।

৬৮১ পেয়ে মেধাতালিকায় দশম স্থানে রয়েছে মেমারি বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউটের (ইউনিট ১) ছাত্র সৌম্যদীপ ঘোষ। ডাক্তার হতে চায় সে-ও। সৌম্যদীপ জানায়, বছর চারেক আগে তার দিদি ভাল নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তার ইচ্ছে ছিল, দিদির নম্বর ছাপিয়ে যাওয়া। দিদিই তাকে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে বলেও জানায় সে। মেমারি কোলে পাড়ার বাসিন্দা, সৌম্যদীপের বাবা স্বপনবাবু একটি গ্রামীণ সমবায় সমিতির কর্মী।
তাঁর কথায়, “ছেলের জন্যে খুব কষ্ট করেছি। তার ফল পেলাম। ছেলে ডাক্তার হতে চায়। আমি সর্বস্ব দিয়ে ওকে সাহায্য করব।’’

Madhyamik Result 2019 Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy