Advertisement
E-Paper

কাঁকসায় মার ডাইনি অপবাদে

ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে মারধর ও গ্রামছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক দল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। কাঁকসার গোপালপুরে ওই মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর দুই ছেলেও প্রহৃত হন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০১:২৮
ভাঙচুর গুমটি। —নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুর গুমটি। —নিজস্ব চিত্র।

ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে মারধর ও গ্রামছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক দল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। কাঁকসার গোপালপুরে ওই মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর দুই ছেলেও প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পঞ্চায়েত প্রধান গ্রামে গেলে তাঁকে আটকে রাখা হয়। শেষে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা মহিলাকে বাড়ি পৌঁছে দেন ও গ্রামের বাসিন্দাদের কুসংস্কারের বিষয়ে সচেতন করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর পঞ্চায়েতের মনেরকোঁদা গ্রামে প্রায় পঞ্চান্নটি আদিবাসী পরিবারের বাস। বেশির ভাগ বাসিন্দাই দিনমজুরের কাজ করেন। গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা অভিযোগ করেন, সোমবার হঠাৎ পাড়ার কয়েক জন মহিলা তাঁর উপরে চড়াও হয়। তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে তারা দাবি করে, তাঁর জন্য গ্রামের বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন, অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। এর পরেই তাঁকে মারধর শুরু হয়। বাঁচাতে গেলে তাঁর দুই ছেলেকেও মারধর, বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির সামনে গুমটি দোকানটিও উল্টে দেওয়া হয়। মহিলা অভিযোগ করেন, তাঁকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

এই ঘটনা চলাকালীন গ্রামের এক বাসিন্দা গোপালপুর পঞ্চায়েতের প্রধান অর্পিতা ঢালিকে খবর দেন। তিনি গ্রামে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলে তাঁর দিকেও উন্মত্ত জনতা লাঠি নিয়ে তেড়ে যান বলে অভিযোগ। প্রধান ফোনে কাঁকসা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মহিলা গ্রামের আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, গ্রামে তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভাল। হামলার পিছনে সেই কারণও থাকতে পারে।

মঙ্গলবার গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য দাবি করেন, ওই মহিলা রাতে গোটা গ্রামে ঘুরে বেড়ান। পুজোর নানা উপকরণ রাস্তায়, পড়শিদের বাড়িতে ফেলে দেন। পাড়ার মোড়ল লখিরাম টুডু জানান, সপ্তাহখানেক আগে পরিবারটির সঙ্গে বৈঠক করে এ সব করতে বারণ করা হয়েছিল। সোমবারও কিছু বাসিন্দা সে কথা বলতে গেলে বচসা থেকে অশান্তি তৈরি হয়। তবে মোড়লের বক্তব্য, ‘‘ওঁকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়নি। গ্রামের অনেকে এখন পড়াশোনা করে। এ সব কুসংস্কার নেই।’’

এ দিন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গ্রামে গিয়ে পরিবারটিকে বাড়িতে ফেরান। কাঁকসার বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস, আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) কমল বৈরাগ্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাও বলেন। বিডিও বলেন, ‘‘কুসংস্কার দূর করতে বাসিন্দাদের বোঝানো হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই পরিবারকে আর কোনও ভাবে বিরক্ত করবেন না।’’ পশ্চিমবঙ্গ বি়জ্ঞান মঞ্চের কাঁকসা কেন্দ্রের সম্পাদক অরুণকিরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা প্রতিনিয়ত কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করছি। ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধেও বোঝানো হচ্ছে।’’

Woman Superstition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy