ভোটে গিয়ে দুই রূপ দেখলাম নারীর। এক জন অনাত্মীয়া হয়েও যত্নে খাওয়ালেন, আর কয়েক জন বিধি নিষেধ তুড়িতে উড়িয়ে বুথের মধ্যে থেকে কার্যত তুলে নিয়ে চলে গেলেন সিপিএমের এজেন্টকে।
প্রতিবারই ভোটের চিঠিটা হাতে পেয়ে একটা রোমাঞ্চ হয়। কেন জানি না ভোটের কাজে যেতে ভালও লাগে। এ বার এক এক করে সবাই চিঠি পেলেও আমারটা আসেনি। মনটা খারাপই হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিডিও সাহেবকে বলে চিঠি এল৷ দু’দিনের ট্রেনিংও শেষ হল৷ ২১ এপ্রিল সকালে জানলাম আউশগ্রামের বড়া চৌমাথায় ডিউটি পড়েছে৷ ১০টা নাগাদ গুসকরা ডিসিআরসিতে পৌঁছলাম৷ সবাই এসে গেলে জিনিসপত্র ভালভাবে দেখে নিয়ে বাসেও উঠে পড়লাম। কিন্তু বাস ছাড়ছে না। জানতে পারলাম সেক্টর অফিসার তখনও এসে পৌঁছননি। অবশেষে উনি এলেন। ৫টা নাগাদ বাসও ছাড়াল। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বুথ নম্বর ২৬১/২৭৩৷
আগে থেকেই বুথে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। হাতমুখ ধুয়ে টিফিন খেয়ে তাঁদের সঙ্গে চুটিয়ে গল্পগুজব শুরু হল। জানতে পারলাম রাতের ও পরের দিনের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে স্থানীয় এক শিক্ষিকার বাড়িতে। অনেকের কাছেই শুনেছি রাতের খাবারের বেশি দাম নেওয়া হয়, আবার টাকা দিয়েও খাবার পাওয়া যায় না অনেক জায়গায়। এখানে অবশ্য সে সব কিছুই হল না। সময়মতো খাবার এসে গেল। আমরাও প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে সাড়ে ১২টা নাগাদ শুয়ে পড়লাম। তবে পরের দিন সব ঠিকঠাক মিটবে কি না, সে উত্তেজনায় ঘুম আসছিল না। রাত কাটল প্রায় বিনিদ্র অবস্থায়। পরের দিন ভোর থেকেই বুথ সরগরম। রুটিনমাফিক এজেন্টরা এলেন। ‘মক পোল’ শেষ হল। ভোটগ্রহণও শুরু হল মসৃণ ভাবে৷ সকাল ৯টা অবধি ২০০, ১২টা অবধি ৪২২— এই ভাবে ভোট চলল৷ আমরা ১০টা নাগাদ লুচি, আলুর দম, মিষ্টি দিয়ে টিফিন সেরে নিলাম৷ দুপুর দু’টোর পর থেকে ভিড় একটু কমতে লাগল৷ তবে ইতিমধ্যে প্রায় ৮০% ভোট হয়ে গিয়েছে। মাঝে আমরা দুপুরের খাবারও পেয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা দিদি পরম স্নেহে আমাদের ভাত, ডাল, আলু ভাজা, মাছ, পটলের তরকারি ও আমের চাটনি খাইয়েছেন৷ সত্যি বলতে কী, এত ভাল খাবার আশা করিনি।
যাই হোক, সাড়ে ৩টে অবধি সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল৷ হঠাৎ ছন্দপতন! কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম চার জন মহিলা ঘরে ঢুকে সিপিএমের এজেন্টকে টেনে বের করে নিয়ে চলে গেলেন৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী তখন নীরব দর্শক৷ নিজের বিহ্বল দশা সামলে ওদের সাহায্য চাইলাম৷ ওরা বলল ‘লেড়কি লোগো কি সাথ হাম কুছ নেহি কর সকতে’। আমরাও বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত। অনেক দূর থেকে ওই এজেন্টের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিলাম৷ সেক্টর অফিসে ফোন করলাম৷ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর বাহিনী এল। অনেক চেষ্টায় সঠিক সময়ে ভোট শেষ হল৷ বাকি কাজ সেরে যখন সব জমা দিলাম তখন ঘড়িতে রাত ৯টা৷ বাসের জন্য আরও খানিক অপেক্ষা করে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরলাম।
ভোট করতে গিয়ে অনাত্মীয়া এক নারীর মাতৃরূপ, আর এক দিকে চার জন রমণীর বিভীষিকা মূর্তি— এমন অভি়জ্ঞতা আগে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy