সচেতনতার প্রচার বা জরিমানা, কোনও কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। দু’দিন কাটতে না কাটতেই কালনায় ফের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীর। যে ট্রাক্টরের সঙ্গে বাইকটির ধাক্কা লাগে, মৃত্যু হয়েছে সেটির চালকেরও।
সরস্বতী পুজোর আগের দিন মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে মৃত্যু হয় কালনার এক স্কুলছাত্রের। অটোর সঙ্গে ধাক্কায় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে সে ও তার এক সহপাঠী। দু’জনরেই মাথায় হেলমেট ছিল না। উৎসবের সময়ে হেলমেট ছাড়াই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মোটরবাইক আরোহীরা, অভিযোগ পথচারীদের। মঙ্গলবার তিন যুবক মোটরবাইকে কালনায় আসছিলেন। পথে একটি ইট বোঝাই ট্রাক্টরের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে বাইকটির। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিন বাইক আরোহীরই মাথায় হেলমেট ছিল না।
এ দিন বিকেলে কালনার বুলবুলিতলা ফাঁড়ি লাগোয়া সোনাডাঙা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। আলিম চাঁদ মণ্ডল, বাদশা শেখ ও সংগ্রাম মান্ডি (৩৫) নামে ওই তিন যুবক কালনার হাঁসপুকুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সরস্বতী পুজো দেখতে আসছিলেন। দুর্ঘটনার পরে ট্রাক্টরটি পাশের মাঠে উল্টে যায়। ইটে চাপা পড়ে যান সেটির চালক। চার জনকেই উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানে চিকিৎসকেরা ট্রাক্টরের চালক ও মোটরবাইকের আরোহী সংগ্রামকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি মেমারির ছোট মশাগড়িয়ায়। রাত পর্যন্ত ট্রাক্টর চালকের নাম-পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। অন্য দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বাড়ি মেমারির মীরপুর ও মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামে।
হেলমেট পরার আর্জি জানিয়ে মাঝে-মধ্যেই রাস্তায় অভিযানে নামছেন জেলার পুলিশকর্তারা। কিন্তু তাতে যে হুঁশ ফিরছে না, তা বারবার এমন ঘটনা থেকেই পরিষ্কার বলে পথচারীদের অভিযোগ। রবিবার কালনা থেকে ধাত্রীগ্রামের পথে তীব্র গতিতে মোটরবাইক ছুটিয়ে যাওয়ার সময়ে অটোর সঙ্গে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বছর পনেরোর সৌম্য গড়াইয়ের। সরস্বতী পুজোর ঠিক আগে শহরে নেমে আসে শোকের ছায়া। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের এমন দুর্ঘটনা ঘটল।
শহরবাসীর দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের আরও বেশি নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। দিনের বেলা ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা নানা মোড়ে নজর রাখলেও বিকেল থেকে তা ঢিলেঢালা হয়ে যায় বলে অভিযোগ তাঁদের। এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায় অবশ্য বলেন, ‘‘হেলমেট পরানোর জন্য নানা ভাবে বোঝানো হয়েছে বাইক আরোহীদের। তার পরেও অনেকে হেলমেট পরছেন না। এর পরে হয়তো হেলমেট না পরে বেরোলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য মেডেল আর শংসাপত্র দিতে হবে, যাতে হুঁশ ফেরে!’’ মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘হেলমেট না পরার বিষয়টি উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা অভিভাবক এবং স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে কালনার পুরশ্রী মঞ্চে একটি কর্মশালা করতে চলেছি। সেখানে হেলমেট পরার জন্য আবার বোঝানো হবে।’’