Advertisement
E-Paper

ইদের খুশি ম্লান গ্রামে

আনিসুর চার দিনের ইদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। সোমবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনীতি সেই দূরে থেকেও সেই রাজনীতির গোলমালই তাঁর প্রাণ কাড়ল বলে পরিজনেদের আক্ষেপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০২:২২
শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আনিসুরের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আনিসুরের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের রাস্তায় জোরে মোটরবাইক চালানো নিয়ে কয়েকদিন ধরেই অসন্তোষ দানা বাঁধছিল রায়নার জ্যোৎসাদি গ্রামে। শনিবার তা নিয়েই সালিশি বসে তৃণমূলের দলীয় অফিসে। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রং লাগে সেখানেও, অন্তত এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজির মাঝে পড়েই প্রাণ হারিয়েছেন গ্রামের যুবক আনিসুর মল্লিক।

আনিসুর চার দিনের ইদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। সোমবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনীতি সেই দূরে থেকেও সেই রাজনীতির গোলমালই তাঁর প্রাণ কাড়ল বলে পরিজনেদের আক্ষেপ। আব্দুস সেলিম মল্লিক, ইলিয়াস মল্লিকদের কথায়, “আমাদের পরিবার কোনও দিন রাজনীতি করেনি। আনিসুর কাজের জন্য ভিন জেলায় গিয়েছিল। কিন্তু রাজনীতির-শিকার হতে হল আমাদের।’’ নিহতের মা আরমিনা বেগমের দাবি, “ছেলেটা আমার গ্যাস-অম্বলের ওষুধ কিনতেই গিয়েছিল। আর ফিরল না।’’

মা-বাবা ও দাদার জন্য ইদের উপহার নিয়ে এসেছিলেন আনিসুর। সবার সঙ্গে নমাজও পড়েছিলেন। আত্মীয়, বন্ধুরা কেউই ভাবতে পারেননি দিনের শেষটা এমন হবে। আনিসুরের বন্ধু সরোজ মল্লিক বলেন, “আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলতাম। ইদের বিকেলেও ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে জোর আলোচনা হয়। বাড়ি যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনলাম এই ঘটনা। মানতে পারছি না।’’ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তৃণমূলের দলীয় দফতর ও পাশের একটি ক্লাবে তালা ঝুলছে। সেখান থেকে কয়েক হাত দূরে নর্দমার উপরেই মুখ গুঁজে পড়েছিলেন আনিসুর। সেখানে চাপ চাপ রক্তের দাগ রয়েছে। বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন মাথার টুকরো বালি চাপা দেওয়া হয়েছে। পাশেই পড়ে রয়েছে বোমার টুকরো। স্থানীয় বাসিন্দা মতিন মল্লিক, আবির আলি, শেখ মুজিবরদের কথায়, “নিরীহ গোবেচারা ছেলেটি বেঘোরে মারা গেল।’’ গ্রাম ঘুরে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। পুলিশের টহল চলছে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বেশ কিছু দোকানও বন্ধ। ঘটনাস্থলের কাছেই থাকা মনীষা বিবির কথায়, “ভয়ের মধ্যে রয়েছি।’’

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে গ্রামের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ লেগেই রয়েছে। দামোদরের ধারের এই পঞ্চায়েতের ‘দখল’ যে গোষ্ঠী নিতে পারবে, তাঁরাই এলাকার বালি ঘাটের ক্ষমতা পাবে। আর সে কারণেই বাম আমল থেকে শুরু হওয়া অশান্তি তৃণমূলের জমানাতেও রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে এই জ্যোৎসাদি গ্রামে বালির ঘাট নিয়ে তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর বিবাদ থামাতে গিয়ে তৎকালীন ওসি সঞ্জয় রায় মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনাও বেশ কয়েকবার ঘটেছে। রায়নার বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকার বলেন, “মোটরবাইকের দাপাদাপি বন্ধ করার কথা বললেও আদতে হিজলনা গ্রাম পঞ্চায়েত কোন গোষ্ঠীর দখলে থাকবে সেটাই ছিল মূল আলোচনার বিষয়বস্তু। সে কারণেই অরাজনৈতিক বিষয়টিও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রূপ নিয়েছে। আর তাতেই ইদের দিন গ্রামের এক নিরীহ যুবকের প্রাণ গেল।’’ এলাকার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই সালিশি বসার কথা মেনে নিলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানেনি। তিনি বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’

নিহতের বাবা আব্দুস সালাম মল্লিকের প্রশ্ন, “রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যাই হোক না কেন, আমি ছেলেকে ফিরে পাব? ইদের দিন বোমাবাজিই বা কেন?’’

Crime Murder TMC Group Clash Eid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy