Advertisement
E-Paper

অচেনা নম্বর থেকে ফোন-মেল, উধাও টাকা

মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন। হ্যালো বলতেই নম্র গলায় ‘স্যার, ব্যাঙ্ক থেকে বলছি। আপনার ডেবিট কার্ডটি লক হয়ে গিয়েছে। দয়া করে, কার্ডের ১৬ সংখ্যার নম্বর দিয়ে সাহায্য করুন।’ এরপর নম্বরটি দিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তে উধাও হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার টাকা।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৬

মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন। হ্যালো বলতেই নম্র গলায় ‘স্যার, ব্যাঙ্ক থেকে বলছি। আপনার ডেবিট কার্ডটি লক হয়ে গিয়েছে। দয়া করে, কার্ডের ১৬ সংখ্যার নম্বর দিয়ে সাহায্য করুন।’ এরপর নম্বরটি দিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তে উধাও হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার টাকা।

সম্প্রতি এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন কালনা মহকুমার অনেকেই। পুলিশের কাছে বেশ কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। কিছুদিন আগে ফোন করে খোদ কালনার মহকুমাশাসককেও প্রতারণা করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। এছাড়া ই-মেল পাঠিয়েও প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলে পুলিশ খবর পেয়েছে।

কালনা ১ ব্লকের বেগপুর পঞ্চায়তের কপ্পুরডাঙা গ্রামের বাসিন্দা আতাউল মণ্ডলের অভিযোগ, সপ্তাহ খানেক আগে এক দুপুরে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। ফোন তুলতেই পুরুষ কণ্ঠটি নিজেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হেড অফিসের কর্মী বলে পরিচয় দেয়। তারপর জানায়, এটিএম কার্ডটি লক হয়ে গিয়েছে। লক খুলতে গেলে দ্রুত কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন, কোন ব্রাঞ্চে অ্যাকাউন্ট, কত দিনের অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। তারপর এটিএম নম্বরটিও জানাতে বলা হয়। সরল মনে তা জানিয়ে দেন আতাউল মণ্ডল। পরে গত শনিবার সহজপুরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন, অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিস হয়ে গিয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আতাউল মণ্ডলের এক আত্মীয়, তৃণমূল নেতা আলতাব হোসেনও বলেন, “গ্রামের মানুষেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সহজ মনে কার্ডের নম্বর জানিয়ে দিচ্ছেন। তাতেই সর্বনাশ হচ্ছে। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছে।” কালনা শহরের শাহু সরকার মোড়ের এক মার্বেল পাথরের ব্যাবসায়ীর কাছেও একই কায়দায় ফোন করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কালনা থানার এক আধিকারিক জানান, সব ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ না হলেও আরও তিনটি এ ধরণের ঘটনার খবর পেয়েছেন তাঁরা। প্রতারিতের তালিকায় রয়েছেন এক স্কুল শিক্ষকও।

শুধু কালনা থানা এলাকা নয়, প্রতারকদের জাল ছড়িয়ে রয়েছে গোটা মহকুমা জুড়েই। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরতপুর পঞ্চায়েতের নোনার মাঠ এলাকার এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কৃষ্ণা নন্দীরও অভিযোগ, পয়লা সেপ্টেম্বর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নাদনঘাট শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা উদাও হয়ে যায়। পরে নাদনঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করে তিনি জানান, আগের দিন সকালে সাড়ে ১১টা নাগাদ ৭৭৮৩০৮৫৮৮৩ নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নাম করে তাকে জানানো হয়, এটিএম নম্বরটি লক হয়ে গিয়েছে। লক খুলতে কার্ডের নম্বর লাগবে। পরে ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তিনি জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা উধাও। এ দিন কৃষ্ণাদেবী বলেন, “ওই ঘটনার পরে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিয়েছি। ভাবতে পারিনি কষ্টের টাকা এ ভাবে চলে যাবে।” প্রতারণার বিষয়টি নজরে এসেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষেরও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকদের এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, অচেনা কাউকে অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোনও নথি দেবেন না। অসুবিধে হলে ব্যাঙ্কে এসে যোগাযোগ করুন।

কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষও জানান, জানুয়ারিতে কলকাতায় থাকাকালীন এক মহিলা কণ্ঠে ফোন আসে তাঁর কাছে। ওই মহিলা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নাম করে তার ক্রেডিট কার্ড বিভাগের মুখ্য শাখা থেকে বলছি বলেন। তারপরেই সব্যসাচীবাবুর অ্যাকাউন্ট নম্বরটি চান তিনি। তবে এসডিও পাল্টা কিছু প্রশ্ন করতেই ফোন রেখে দেন ওই মহিলা। পরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে মহকুমাশাসক জানতে পারেন, এ ধরণের কোনও ফোন করা হয়নি। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নাম করেই একটি ই-মেলও এসেছিল মহকুমাশাসকের কাছে। চাচে জানানো হয়, তিনি লটারিতে টাকা জিতেছেন। টাকা পেতে নিজের নাম ঠিকানার সঙ্গে ব্যাঙ্কের অ্যক্যাউন্ট নম্বরটি পাল্টা মেল করতেও বলা হয়। সব্যসাচীবাবু বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই ব্যাঙ্কের লেটারহেড নকল করে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।” তাঁর দাবি, প্রতারণার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে সচেতনতা শিবির করা দরকার। পুলিশও জানিয়েছে, ঘটনাটি সাইবার ক্রাইমের মধ্যে পড়লেও তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর করছেন।

kedarnath bhattacharya kalna money disappear unknown number
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy