Advertisement
E-Paper

অভাব টপকেও স্বপ্ন ছোঁয়া নিয়ে সংশয়ে দুই পড়ুয়া

কারও স্বপ্ন, বড় হয়ে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে গরিবগুরবো মানুষের রোগের চিকিৎসা করা। আবার কারও ইচ্ছে অঙ্কের অধ্যাপক হয়ে ভাল ছাত্রছাত্রী তৈরি করা। কিন্তু সন্তানের এই স্বপ্ন নিয়ে তাদের বাবা-মা যখন ভাবেন, তখনই কপালের ভাঁজ বেড়ে যায়। কেননা, মানকরের পালপাড়ার নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ ও পারাজের রামগোপালপুর গ্রামের বুদ্ধদেব রায় বিলক্ষণ জানেন, তাদের ছেলে-মেয়ের স্বপ্নপূরণের পথে প্রধান কাঁটা সংসারের অভাব।

বিপ্লব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০০:০৯
প্রিয়া রায় ও অঞ্জন ঘোষ। ছবি: বিকাশ মশান।

প্রিয়া রায় ও অঞ্জন ঘোষ। ছবি: বিকাশ মশান।

কারও স্বপ্ন, বড় হয়ে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে গরিবগুরবো মানুষের রোগের চিকিৎসা করা। আবার কারও ইচ্ছে অঙ্কের অধ্যাপক হয়ে ভাল ছাত্রছাত্রী তৈরি করা। কিন্তু সন্তানের এই স্বপ্ন নিয়ে তাদের বাবা-মা যখন ভাবেন, তখনই কপালের ভাঁজ বেড়ে যায়। কেননা, মানকরের পালপাড়ার নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ ও পারাজের রামগোপালপুর গ্রামের বুদ্ধদেব রায় বিলক্ষণ জানেন, তাদের ছেলে-মেয়ের স্বপ্নপূরণের পথে প্রধান কাঁটা সংসারের অভাব।

পারাজের রামগোপালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রিয়া রায় এ বার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৩৯ নম্বর। স্কুল জীবনে বরাবরই ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত এই মেয়েটির পরিবারের নিত্য সঙ্গী হল অভাব। পরিবারের আয়ের উৎস বলতে বাবা বুদ্ধদেব রায়ের একচিলতে পানের গুমটি ও মাঝে মধ্যে একশো দিনের কাজ। আর্থিক অনটনের জন্য নিজেদের বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে আগেই। তবে বাড়ি বিক্রি হয়ে গেলেও সেখান থেকে তাদের যেতে হয়নি। প্রিয়ার পড়াশোনার ক্ষেত্রে তার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা যেমন সাহায্য করেছেন তেমনই এগিয়ে এসেছেন অনেক সহৃদয় ব্যক্তি। প্রিয়া জানায়, কয়েক জন গৃহশিক্ষক তাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। পড়াশোনার সঙ্গেই নিয়মিত গানের রেওয়াজ করে এই মেয়ে। প্রিয় বিষয় অঙ্কে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৯। ভবিষ্যতে অঙ্ক নিয়েই গবেষণা করে অধ্যাপক হতে চায় প্রিয়া। তার মা গোপারানীদেবীর আশা, মেয়ে বড় হয়ে তাঁদের অভাব মেটাবে।

মানকর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র অঞ্জন ঘোষ এ বার মাধ্যমিকে ৫৯১ নম্বর পেয়েছে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এই ছাত্র অভাবের চড়াই উতরাই পেরিয়ে এসেছে। অঞ্জনের বাবা নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ পেশায় ভ্যানচালক। দিনরাত চোয়ালভাঙা পরিশ্রম করে ছেলেকে পড়াচ্ছেন তিনি। ছেলে মর্যাদা রেখেছে। কিন্তু এর পরে? খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরের বারান্দায় বসে অঞ্জন জানায়, সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞানে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৬। অবসরে ক্রিকেট খেলতে ভাল লাগে অঞ্জনের। তার কথায়, “আমার এই ফলে অনেক কৃতিত্ব রয়েছে গৃহশিক্ষক বাসুদেব পালের। তবে স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে সবসময়ই সাহায্য পেয়েছি।” অঞ্জনের মা রেবা ঘোষ বলেন, “ছেলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু টাকা কীভাবে আসবে সেটাই চিন্তার।” মানকর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের আবেদন, স্কুলে বরাবরই ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত অঞ্জন উচ্চশিক্ষাতেও যাতে ফল করে তার জন্য প্রয়োজন সাহায্য।

প্রিয় ছাত্রের পড়ায় দাঁড়ি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রধান শিক্ষকের গলাটাও যেন কেঁপে ওঠে।

biplab bhattacharya budbud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy