Advertisement
E-Paper

আঁধার কাটেনি বহু আর্জিতেও, ক্ষোভ পুরবাসীর

আঁধার নিয়ে কথা বলতে তাঁদের আর তেমন আগ্রহ নেই। বারবার দাবি-দাওয়া জানিয়ে যখন কাজ হয়নি, আর কথা বাড়িয়ে লাভ কী হবে, প্রশ্ন আসানসোল পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি এলাকার প্রায় হাজার তিনেক বাসিন্দার। পুর এলাকার বাসিন্দা হয়েও রাত নামলেই বাস জমাট অন্ধকারে। কয়েকটি খুঁটি বসলেও বিদ্যুৎ যে আসেনি। বৃষ্টি নামা মানে হাঁটু পর্যন্ত কাদাজল ডিঙিয়ে যাতায়াত।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৫
খুঁটি পোঁতা হলেও বিদ্যুৎ আসেনি। বনসরাকডিহিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

খুঁটি পোঁতা হলেও বিদ্যুৎ আসেনি। বনসরাকডিহিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

আঁধার নিয়ে কথা বলতে তাঁদের আর তেমন আগ্রহ নেই। বারবার দাবি-দাওয়া জানিয়ে যখন কাজ হয়নি, আর কথা বাড়িয়ে লাভ কী হবে, প্রশ্ন আসানসোল পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি এলাকার প্রায় হাজার তিনেক বাসিন্দার।

পুর এলাকার বাসিন্দা হয়েও রাত নামলেই বাস জমাট অন্ধকারে। কয়েকটি খুঁটি বসলেও বিদ্যুৎ যে আসেনি। বৃষ্টি নামা মানে হাঁটু পর্যন্ত কাদাজল ডিঙিয়ে যাতায়াত। পানীয় জল পেতে ঠেঙিয়ে যেতে হয় অনেকটা পথ। ভোটের আগে-পরে নানা দলের নেতা-কর্মীরা আসেন, আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়। বাসিন্দারা দল বেঁধে ভোট দিয়ে আসেন। কিন্তু হাল পাল্টায় না, এমনই অভিযোগ ওই পাঁচ এলাকার মানুষজনের।

দু’নম্বর জাতীয় সড়ক পেরিয়ে পাঁচগাছিয়ার দিকে কিছুটা যাওয়ার পরে ডান দিকে বাঁক নেয় লাল মাটির রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে খানিকটা এগোলেই বনসরাকডিহি গ্রাম। এখানকার মাজিপাড়া, ভুঁইয়াপাড়া, শিবানি বাউড়িপাড়া। সেখান থেকে পূর্ব দিকে আরও খানিকটা এগোনোর পরে পলাশডিহা, জরুলডিহি, গোয়ালাপাড়া, মাজিপাড়া। কোনও এলাকাতেই বিদ্যুৎ নেই। কাঁচা রাস্তা। একটি মাত্র জলের কল। কুয়ো একটি আছে, তবে এখন তা শুকিয়ে কাঠ। সংস্কারও হয়নি বহু দিন। এক সকালে মাজিপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, মাঝে একটি নিমগাছের ছাওয়ায় খাটিয়া বিছিয়ে আড্ডা জমিয়েছেন কয়েক জন। এলাকায় বিদ্যুৎ আছে কি না, প্রশ্ন করলে উত্তর নেই। মেলে শুধু বিরক্তির চাউনি। শেষে এক প্রবীণ বাসিন্দা বাবুলাল হাঁসদার পাল্টা প্রশ্ন, “কী হবে এ সব জেনে? আমরা এই এক কথা ৫০ বছর ধরে সবাইকে বলছি। কিছু লাভ হয়নি। হবেও না।” গ্রামের যুবক পবন সাউ জানালেন, বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁকে পড়াশোনার জন্য হুগলিতে মামার বাড়ি চলে যেতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, “গত বিধানসভা ভোটের আগেও আমরা সব দলের নেতাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছিলাম। কেউ কিছু করেনি।”

গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি শনিবার বিকেলে তাঁরা ব্যাটারি ভাড়া করে আনেন টেলিভিশনে সিনেমা দেখার জন্য। ববিতা সাউ নামে এক জনের কথায়, “অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সিনেমা দেখি। আনন্দ-ফূর্তি বলতে এটুকুই।” সামনের বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে দিলীপ হাঁসদা। সে বলে, “রাতে কুপির আলোয় বেশিক্ষণ পড়তে পারি না। চোখ ব্যথা করে। বিদ্যুৎ এলে আমাদের সুবিধা হত।”

শুধু বিদ্যুতের সমস্যাই নয়। গ্রামের একটি মাত্র জলের কল থেকে বাসিন্দারা পর্যাপ্ত জলও পান না বলে অভিযোগ। তাই পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই কয়েক ক্রোশ পথ উজিয়ে গিয়ে জল বয়ে আনেন। ভোটের আগে বারবার রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কাজ না হওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাই কোনও নেতার কাছে আর যেতে চান না তাঁরা। সম্প্রতি এলাকার কিছু বাসিন্দা দল বেঁধে গিয়েছিলেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসের কাছে। কিন্তু নির্বাচনি বিধিনিষেধ থাকায় সব শুনেও কোনও মন্তব্য করেননি মহকুমাশাসক। আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, ওই এলাকার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। ভোটের পরে কাজ হবে বলে তাঁর আশ্বাস।

কত দিন এই পরিস্থিতিতে কাটাতে হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন এই এলাকার বাসিন্দাদের।

sushanta banik asansol electricity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy