ভোট মিটতে জেলা প্রশাসন দাবি করেছিল, অবাধ হয়েছে নির্বাচন। তবে বিস্তর ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা তরফে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল বহু বুথে। শেষ পর্যন্ত জেলার মোট আটটি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন।
সোমবার কমিশনের তরফে রাজ্যে তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া যে ১১টি বুথে ফের ভোটগ্রহণের কথা জানানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের চারটি, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের একটি এবং বোলপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের দু’টি ও আউশগ্রামের একটি বুথ। আজ, মঙ্গলবার এই সব জায়গায় ফের ভোট নেওয়া হবে। তবে কীসের ভিত্তিতে এই পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হল, তা বর্ধমানের রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানাতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আমাদের জেলায় ৮টি বুথে ফের ভোট হবে। পুনর্নির্বাচনের কারণ নির্বাচন কমিশনই বলতে পারবে।”
গত ৩০ এপ্রিল ভোট হওয়ার পরে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে ১৮৯২ বুথের মধ্যে ১৪১টি এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের ১৯৭০টি বুথের মধ্যে ১৫৩টিতে পুনর্নিবাচন দাবি করেছিল বামেরা। মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ও কেতুগ্রামে মোট ১৭০টি বুথে ফের ভোটের দাবি জানায় বিরোধীরা। এ দিন মাত্র ৮টি বুথে পুনর্নির্বাচনের কথা ঘোষণা হওয়ায় বিরোধীরা হতাশা জানিয়েছে। তবে তাদের দাবি, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করল, ভোট মিটতে না মিটতেই প্রশাসনের তরফে যে অবাধ নির্বাচনের কথা দাবি করা হয়েছিল, তা পুরোপুরি ঠিক ছিল না।
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের জামালপুরে চকবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭ নম্বর বুথে আজ, মঙ্গলবার ফের ভোটগ্রহণ হবে। ৩০ এপ্রিল বিকেল ৪টে নাগাদ এই বুথে গিয়ে জানা গিয়েছিল, ২৭১টি ভোটের মধ্যে ২৫২টি পড়ে গিয়েছে। অথচ, তখন ওই বুথের সামনে ছিল জনা পঞ্চাশের ভিড়। সেই ভিড়ে থাকা লোকজনেরাই ভোটারদের বুথে আসতে বাধা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল সম্পাদক সমর ঘোষ। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে ভাতারের ১২৬ নম্বর এবং গলসির ২৮, ১৭৪ ও ১৭৫ বুথে নতুন করে ভোট নেওয়া হবে।
বোলপুর আসনের মঙ্গলকোটে পালিগ্রামের দেবগ্রামে ১৪ নম্বর, লাখুরিয়ার চাকদহে ৫৩ নম্বর ও আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামে ২৮ নম্বর বুথে ভোট হবে। ৩০ এপ্রিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ করেছিল, এই সব বুথে শাসকদল বিভিন্ন কায়দায় ভোট লুঠ করেছে। এমনকী, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই সব বুথে ৯৪ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছিল। এমনকী, দুপুর ১২টার মধ্যেই ৯০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়ে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা, ভোট বেশি পড়ার জন্যই নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফের ভোটের নির্দেশ দিয়েছে।
সিপিএম নেতাদেরও অনুমান, ভোট বেশি পড়ার জন্যই পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সিপিএমের আউশগ্রামের জোনাল সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদার বলেন, “আমরা ৫১টি বুথ নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। সেখানে একটি মাত্র বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। তার মানে, যেখানে বেশি ভোট পড়েছে, সেখানেই কমিশন ফের ভোট করাচ্ছে।” তবে মঙ্গলকোটের দেবগ্রামের বুথটি নিয়ে বিরোধীদের কোনও অভিযোগ ছিল না বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ এই ৮টি বুথে ফের ভোটগ্রহণের নির্দেশ মেল করে জানানো হয় জেলাশাসককে। অল্পক্ষণের মধ্যে এই খবর পেয়ে যান জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। কিন্তু বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর দাবি, দুপুর ২টো পর্যন্ত তিনি পুনর্নির্বাচনের খবর পাননি। এ দিন তাঁর প্রশ্ন, “প্রার্থীরই যখন এই অবস্থা, তখন যে এলাকায় ফের ভোট হতে চলেছে, সেখানকার মানুষ কী করে জানবেন, কাল ভোট দিতে যেতে হবে?” জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “ওই আটটি বুথ এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পাওয়ার পরেই মাইকে প্রচার করে ভোটারদের পুনর্নির্বাচনের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সিপিএমের বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সাইদুল হক অবশ্য প্রশাসনের এসএমএস পেয়ে জানতে পারেন, তাঁর কেন্দ্রের চার বুথে নতুন করে ভোট হবে। তাঁর দাবি, “আমার কেন্দ্রে ১৫৩টি বুথে রিগিং হয়েছে। তাই ওই সব ক’টি বুথেই পুনর্নিবাচন চেয়েছিলাম। নির্দিষ্ট প্রমাণ নিয়ে দেখাও করি জাতীয় নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। জেলা প্রশাসন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন তো একটিও বুথে নতুন করে ভোট নিতে চায়নি। যাক, দিল্লি তা-ও চারটিতে পুনর্নিবাচন করাচ্ছে!” জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের সব অভিযোগ কমিশন মানেনি। তবু কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে প্রমাণ হল, ৩০ এপ্রিলের ভোটে কারচুপি হয়েছে।”
তৃণমূল অবশ্য এর পরেও মানতে নারাজ, সে দিনের ভোটে কোনও গোলমাল হয়েছিল। দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপনবাবুর দাবি, “ভোট নিয়ে কোনও গোলমাল হয়নি। কোথাও ছাপ্পা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। তবে সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেস মিলিত ভাবে হাজার-হাজার অভিযোগ তুলেছিল। ওদের খুশি করতেই বোধহয় নির্বাচন কমিশন ওই আটটি বুথে ভোট করাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy