Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আসছেন তিনি, টক্কর দিতে পথে নামছেন দেব

নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা দীপক অধিকারী। আসানসোলে বিজেপি-র তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় যাতে প্রচারের সবটুকু আলো শুষে নিতে না পারেন তার জন্য যত দূর সম্ভব তারকা সমাবেশ করতে মরিয়া তৃণমূলও। আগেই এসেছেন মিঠুন। ঘুরে গিয়েছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২৯ এপ্রিল আসছেন নচিকেতা, ৩০শে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১ থেকে ৪ মে শতাব্দী রায়।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা দীপক অধিকারী।

আসানসোলে বিজেপি-র তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় যাতে প্রচারের সবটুকু আলো শুষে নিতে না পারেন তার জন্য যত দূর সম্ভব তারকা সমাবেশ করতে মরিয়া তৃণমূলও।

আগেই এসেছেন মিঠুন। ঘুরে গিয়েছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২৯ এপ্রিল আসছেন নচিকেতা, ৩০শে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১ থেকে ৪ মে শতাব্দী রায়। তারকা না হলেও ওই চার দিন পড়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় খনি ও ইস্পাত বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আসছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, শাহি ইমাম বরকতি, বেচারাম মান্না।

কিন্তু তুরুপের তাস শ্রীযুক্ত দীপক অধিকারী ওরফে দেব। ঠিক যে দিন বাবুলের সমর্থনে মোদী জনসভা করতে আসছেন, সেই ৪ মে-ই তাঁকে আসরে নামানো হচ্ছে। মোদীর সভাস্থল আসানসোল শহর লাগোয়া জামুড়িয়ার নিঘা ময়দান। আর দেব রোড-শো করবেন খোদ আসানসোল শহরেই। পরের দিন বিকেলে প্রচার শেষ, ভোট ৭ মে।

গত দু’তিনটি নির্বাচনে পাওয়া ভোটের হিসেবে আসানসোল তাদের শক্ত ঘাঁটি হলেও তৃণমূলের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিজেপি। কেননা বিপুল লোকসান সত্ত্বেও সিপিএমের যে এখনও বেশ কিছুটা ভোট অক্ষত আছে, সে বিষয়ে কোনও মহলেই সন্দেহ নেই। দ্বিমুখী লড়াইয়ে তারা অনেক পিছিয়ে থাকবে ঠিকই। কিন্তু এক দিকে কংগ্রেস তো কিছু ভোট কাটবেই, তার চেয়েও বড় বিপদ বিজেপি। গোড়ায় মোদী-ঝড়ের তীব্রতা যেমন ততটা মালুম হয়নি, বাবুলকেও হাল্কা ভাবেই নিচ্ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বাবুল যে ভাবে জান লড়িয়ে দিয়েছেন তাতে বহু হিসেবই তিনি এলোমেলো করে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা অনেকেরই।

ইতিমধ্যে মদ্যপান করে মন্দিরে ঢোকা থেকে অস্ত্র আইন, একের পর এক মামলা করা হয়েছে বাবুলের বিরুদ্ধে। এ দিনই বর্ধমান সার্কিট হাউসে গিয়ে বিশেষ নির্বাচনী আধিকারিক সুধীরকুমার রাকেশের সঙ্গে দেখা করেন বর্ধমান জেলা বিজেপি-র প্রতিনিধিরা। বাবুল সুপ্রিয়কে নানা ভাবে হয়রান করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে তাঁরা সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করেছেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি দেবীপ্রসাদ মল্লিকের দাবি, “উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বাবুলের ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। তবে সব বুথে যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া সম্ভব হবে না, তা-ও বলে দিয়েছেন।”

বাবুলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এনেও কিন্তু লাভ কিছু হয়নি। উল্টে আরও বেশি প্রচার পেয়ে গিয়েছেন বিজেপি-র তরুণ প্রার্থী। রাস্তা অবরোধের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েও ভেসে গিয়েছেন গুণগ্রাহীদের ভিড়ে। এই অবস্থায় মোদী এলে গেরুয়া-হাওয়া আরও তীব্র হওয়ার সম্ভবনা। সম্ভবত সে কারণেই ‘লাস্ট ল্যাপে’ তারকা-যুদ্ধে যাওয়ার রাস্তা নিয়েছে তৃণমূল। আসানসোলে ইতিমধ্যেই প্রথম দফায় তিনটি জনসভা করে গিয়েছেন মমতা। ফের তিনি আসছেন। শুক্রবার আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন নিজেই জানান, “৩০ এপ্রিল আসানসোলের পোলো মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা হবে। এ ছাড়া দেব, নচিকেতা, শতাব্দী-সহ আরও কিছু ব্যক্তিত্ব আসানসোল কেন্দ্রে প্রচারে আসছেন।”

কে, কবে, কোথায়? দোলা জানান, ২৯ এপ্রিল নচিকেতা আসানসোলের চিত্রা থেকে বিএনআর মোড় পর্যন্ত রোড-শো করবেন। ৪ মে মহীশিলা থেকে এস বি গড়াই রোড এলাকায় রোড-শো করবেন দেব। ১ থেকে ৪ মে পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে প্রচার করবেন শতাব্দী রায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্নপুর ও জামুড়িয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বার্নপুর ও কুলটির বিভিন্ন এলাকায় সুলতান আহমেদ এবং শাহি ইমাম বরকতি, অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, বল্লভপুর, রানিগঞ্জে বেচারাম মান্না সভা করবেন। তবে কি তৃণমূল হারার ভয় পাচ্ছে?

দোলার দাবি, “মোদী ও বিজেপি-কে মিডিয়া হাইপ দিচ্ছে। তাতে আমরা একেবারেই চাপে নেই। ২০০৯-এ বিজেপি এখানে ৫% ভোট পেয়েছিল। সেটা নিশ্চয়ই এ বার এক লাফে ৫০ শতাংশে পৌঁছবে না! অঙ্কের হিসেবে আমরা অনেক এগিয়ে আছি। ৪ মে যে দেব আসবে, সেটা ৪ এপ্রিলই মমতাদি আমাদের বলে গিয়েছিলেন। আমরা প্রকাশ করিনি।” এত তারকা কেন? দোলার ব্যাখ্যা, “প্রথমে আমরা তৃণমূল স্তরে গিয়ে প্রচার করেছি। ভোট যত এগিয়ে আসছে, তারকা ও বিশিষ্টজনদের এনে চাঙ্গা করছি।”

কী বলছেন বাবুল? “এটা রাজনৈতিক লড়াই। কোনও জলসার মঞ্চ নয়। বলিউডে আমারও অনেক বন্ধু আছে, কিন্তু তাঁদের ডেকে প্রচারে নামানোটা পেশাদারিত্ব বলে আমি মনে করি না।” এতটা বলেই বাবুল জানাচ্ছেন, তৃণমূলের প্রচারে যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর বন্ধু। প্রচারের ময়দানে সেই বন্ধুরা কী বলেন, সেটা জানতেই বরং তিনি বেশি উদগ্রীব।

ভিতরে-ভিতরে কি ভয় পাচ্ছেন?

হেসে ফেলেন বাবুল “আরে না না! আমি মোদীজির কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের সমর্থন চাইছি। এটাই শেষ কথা। গানটা গান, রাজনীতিটা রাজনীতি!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi deb asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE