Advertisement
০৬ মে ২০২৪

কনেযাত্রীর বাস, গাড়ি আটকে লুঠ মাঝরাতে

মাঝরাতে রাস্তায় গাছ ফেলে দুটি বিয়ের বাস ও একটি চামড়াবোঝাই গাড়ি আটকে অবাধে লুঠপাট চালাল দুষ্কৃতীদের একটি দল। মারধর করা হয় একটি বাসের যাত্রী ও চালককেও। পরে বিধায়কের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তাদের। শনিবার সাতগাছিয়া-কুসুমগ্রাম রাস্তায় ঘণ্টাখানেক ধরে ওই লুঠতরাজ চলে। যাত্রীদের দাবি, প্রথমবার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আবারও ফিরে এসে মারধর করে দুষ্কৃতীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

মাঝরাতে রাস্তায় গাছ ফেলে দুটি বিয়ের বাস ও একটি চামড়াবোঝাই গাড়ি আটকে অবাধে লুঠপাট চালাল দুষ্কৃতীদের একটি দল। মারধর করা হয় একটি বাসের যাত্রী ও চালককেও। পরে বিধায়কের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে তাদের।

শনিবার সাতগাছিয়া-কুসুমগ্রাম রাস্তায় ঘণ্টাখানেক ধরে ওই লুঠতরাজ চলে। যাত্রীদের দাবি, প্রথমবার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আবারও ফিরে এসে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। গোলমালে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় একটি গরুবোঝাই ম্যাটাডর। গলায় ফাঁস লেগে মারা যায় কয়েকটি গরুও।

ওই রাতে কালনার ধাত্রীগ্রাম থেকে মন্তেশ্বরের খাঁদরায় মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠান সেরে কনেযাত্রীবোঝাই বাস নিয়ে ফিরছিলেন পার্থ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, শীতের রাতে বেশিরভাগ যাত্রীই বাসের জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পৌনে ১টা নাগাদ সাতগাছিয়া-কুসুমগ্রাম রোডের ঝিঁকরে সেতু পার হতেই আচমকা বাসটি থেমে যায়। চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে দেখেন, সামনে আমগাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকানো, দাঁড়িয়ে চামড়াবোঝাই একটি গাড়ি। পরিস্থিতি বুঝতে না বুঝতেই কয়েকজন বাসের দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে। কাপড়ে মুখ ঢাকা আরও কয়েকজন জানালার কাচ ভাঙতে শুরু করে। ইতিমধ্যে ভয়ে পেয়ে দরজা খুলে দিতেই ওই দুষ্কৃতী দলটি গালিগালাজ করতে করতে উপরে উঠে বাসের আলো বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। তারপরে যাত্রীদের বেধড়ক মারধর শুরু করে তারা। বাসচালক তারমধ্যেই কোনওমতে জানালা দিয়ে পালায়।

বাসের যাত্রীদের দাবি, মিনিট কুড়ির মধ্যে সামনের দিক থেকে একটি গাড়ি আসতে দেখে পুলিশের গাড়ি ভেবে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তারমধ্যেই অবশ্য খান আটেক মোবাইল কেড়ে নেয়। কিন্তু চালক না থাকায় বাধ্য হয়েই ওখানেই আটকে থাকেন যাত্রীরা। সুনসান রাস্তায় চিৎকার করেও লাভ হয় না বলে তাঁদের অভিযোগ। এরমধ্যেই আবারও ফিরে আসে দুষ্কৃতী দলটি। যাত্রীদের অভিযোগ, আগের থেকেও মারধর করে নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা কেড়ে নেয় ওই দুষ্কৃতীরা। সামনের চামড়াবোঝাই গাড়িটি থেকেও কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস লুঠপাট করা হয় বলে অভিযোগ। টাকাপয়সা, গয়নাগাটি ছিনিয়ে নেওয়া হয় আর একটি কনেযাত্রীবোঝাই বাসের যাত্রীদের থেকেও।

ওই রাস্তা ধরেই তখন আসছিল গরুবোঝাই একটি ম্যাটাডর। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখে নিয়ন্ত্রণ হারান ম্যাটাডরের চালক। রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে পড়ে যায় গাড়িটি। গলায় ফাঁস লেগে মারা যায় বেশ কয়েকটি গরুও। পরে বাসযাত্রীদের একজন পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে বিষয়টি জানান। বিধায়কের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। সবাই হাত লাগিয়ে গাছের গুঁড়ি সরানোর পরে বাস ছাড়ে। মন্তেশ্বর থানার পুলিশ সাতগাছিয়া বাজার পর্যন্ত এগিয়ে দেয় বাসটিকে।

এ দিকে পালিয়ে যাওয়া বাসের চালক এক আদিবাসী গ্রামে ঢুকে ফোনে কালনা থানার পুলিশকে বিষয়টি জানান। আহত যাত্রীদের আটঘরিয়া সিমলন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর সময় সেখানে হাজির হয় পুলিশ। বাসযাত্রীদের অভিযোগ, ঘণ্টাকানেক ধরে মারধর, লুঠপাট চলার সময়ে পুলিশের দেখা মিলল মা। অথচ সমস্যা মিটে যেতেই দুই থানার পুলিশ হাজির। বাসের আর এক যাত্রী আইভি দেবী বলেন, “দুষ্কৃতীরা মেয়েদেরও রেয়াত করেনি। আমাকেও চড়-লাফি মেরেছে।” পরে পার্থবাবুও বলেন, “এতদিন টিভিতে দেখেছি, খবরের কাগজে পড়ছি। ওই রাতে চোখের সামনে দেখলাম।”

দুষ্কৃতীদের কবলে পড়া এক বাসযাত্রীর ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিধায়ক তপনবাবু। তিনি বলেন, “শনিবার রাত ১টা ২০ নাগাদ পরপর কয়েকবার ফোন বাজে। উঠে ধরতেই শুভ্রাংশু ঘোষ নামে এক পরিচিত জানান, তাঁদের বাসে লুঠপাট হয়েছে। দ্রুত তারা কোথায় আছেন জেনে মন্তেশ্বর থানা ও কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকারকে ফোন করি।” যদিও কোনওরকম গাফিলতির কথা স্বীকার করতে চায়নি মহকুমা পুলিশ। মহকুমা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ঘটনার কথা জানতে পারার পরেই দ্রুত এলাকায় পৌঁছয় মন্তেশ্বর থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে থাকা একটি গাড়ি আটক করা হয়েছে। খোঁজ চলছে ওই দুষ্কৃতীদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bus robbery manteswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE