অজয়ের পাড়ে দেদার চুরি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
অবৈধ খাদান থেকে বালি তোলা রুখবে কে?
সেচ দফতর ও ভূমি দফতরের দফতরের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে এ নিয়ে। দু’দফতরই তাদের ঘাড় থেকে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে পরস্পরের দিকে আঙুল তুলেছে। তার ফাঁকে কাটোয়া মহকুমায় অজয় নদের দু’পাড়ে বেআইনি বালি খাদান চলছে রমরমিয়ে।
শুধু বালি তোলা নয়, প্রতি দিন একই পথে কয়েকশো বালির গাড়ির যাতায়াত। ফলে, অজয়ের পাড়ের রাস্তাগুলি বেহাল হয়ে পড়ছে। রাস্তায় যানজট হচ্ছে। আবার বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় কয়েক মাসে বেশ কয়েক জন প্রাণ হারিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর পরেও বেপরোয়া বালির গাড়ি রোখার জন্য প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
বছর বারো আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে কাটোয়া থেকে কেতুগ্রামের চড়খির কাশীরাম দাস সেতু পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, গোয়াই থেকে ওই সেতু পর্যন্ত একাধিক বেআইনি বালির খাদান রয়েছে। ফলে, প্রতি দিনই প্রচুর বালি বোঝাই ট্রাক ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভারী ট্রাকের যাওয়া-আসায় রাস্তাটির অবস্থা দফারফা। কোথাও বড়বড় গর্ত তৈরি হয়েছে তো কোথাও রাস্তায় পিচ উঠে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। একই অবস্থা রসুই ঘাট থেকে রাজুয়া বাসস্টপ পর্যন্ত। ওই রাস্তাতেও পিচ দেখা যায় না। পিচের উপরে পুরু হয়ে বালির আস্তরণ পড়েছে। মঙ্গলকোটেরও বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার একই অবস্থা। শুধু রাস্তা নয়, বেআইনি খাদান থেকে বালি নিয়ে যাতায়াতের ফলে অজয়ের বাঁধেরও বেশ ক্ষতি হচ্ছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা বেআইনি বালির ঘাট বন্ধ ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও সাড়াই মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলকোটে অজয় নদের উপরে সব চেয়ে বেশি বেআইনি বালির খাদান রয়েছে। সরকার অনুমোদিত খাদান রয়েছে গোটা ছয়েক। কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি বালি খাদান চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী গাড়ি যাতায়াতের জন্য কোনও রাস্তা ৩-৪ মাসের বেশি টেকে না। তার উপরে বালি খাদান নিয়ে প্রায় সময়ই গোলমাল লেগে থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক সপ্তাহ আগে বটগ্রামের এক যুবক বালির গাড়ির ধাক্কায় মারা যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মঙ্গলকোটের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশের মদতে এই বালি খাদানগুলি চলছে। এই সব খাদান বন্ধের দাবি করলেও মঙ্গলকোটের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন। তা নিয়ে বিডিও-র কাছে অভিযোগও করেছেন বাসিন্দারা। বিডিও সুশান্ত মণ্ডল বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখছি।”
গত ফেব্রুয়ারিতে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের বাণিজ্য দফতর থেকে সেচ দফতর প্রয়োজনীয় অনুমতি পেয়ে গিয়েছে, এ বার থেকে বালি তোলা সংক্রান্ত অনুমতি ও তার রাজস্ব আদায় তারা করবে। এ নিয়ে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করেন সেচমন্ত্রী। মঙ্গলবার সেচ দফতরের কাটোয়া মহকুমার আধিকারিক প্রদীপ দাস জানান, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশ আসেনি। অন্য দিকে, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতের কাটোয়া মহকুমার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শশধর রাউত পরিষ্কার জানান, বালির খাদান নিয়ে তাঁদের আর কোনও দায়িত্ব নেই। এ ব্যাপারে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, বালি তোলার অনুমতি ও রাজস্ব আদায় সেচ দফতর করবে। সেচ দফতর আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে কাটোয়ার জাজিগ্রাম মোড়ে বালির গাড়ি থেকে ‘টোল ট্যাক্স’ আদায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর কেন করে?
এই দুই দফতরের টানাপড়েনে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পড়ছে বলে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় কাটোয়া মহকুমায় গত কয়েক মাসে ৪ শিশু-সহ বেশ কয়েক জন প্রাণ হারিয়েছেন। কাটোয়ার পানুহাটে জনতা বালির গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছিল। তার আগে কাটোয়ার কাছে অজয়ের বাঁধেও একই ঘটনা ঘটে। একের পর এক মৃত্যুর পরেও বালি খাদান বন্ধ তো দূর, বেপরোয়া বালির গাড়ি আটকানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কাটোয়া মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার অবশ্য বলেন, “বেআইনি বালির খাদান রুখতে আমরা যে কোনও দিন অভিযান চালাতে পারি। তার প্রস্তুতি চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy