Advertisement
০৫ মে ২০২৪

গ্যারাজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে মৃত দুই

বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যু হল দু’জন বাসিন্দার। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে আসানসোলের কুমারপুরে। একটি গ্যারাজ থেকে ওই গ্যাস ছড়ায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জনা চল্লিশ এলাকাবাসী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গ্যাসের সিলিন্ডারটি উদ্ধার করে দমকল ও পুলিশ।

গ্যারাজ থেকে বের করা হচ্ছে সেই সিলিন্ডার। আসানসোলের কুমারপুরে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

গ্যারাজ থেকে বের করা হচ্ছে সেই সিলিন্ডার। আসানসোলের কুমারপুরে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৭
Share: Save:

বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যু হল দু’জন বাসিন্দার। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে আসানসোলের কুমারপুরে। একটি গ্যারাজ থেকে ওই গ্যাস ছড়ায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জনা চল্লিশ এলাকাবাসী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় গ্যাসের সিলিন্ডারটি উদ্ধার করে দমকল ও পুলিশ। কী ভাবে এমন ঘটল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম সত্যবালা দে (৮০) ও উজ্জ্বলা দেবী (৭৫)। তাঁদের বাড়ি কুমারপুর লাগোয়া গোপালপুর এলাকায়। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “অসুস্থ অবস্থায় এগারো জনকে ভর্তি করানো হয়েছিল। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের চিকিত্‌সা চলছে।” আশপাশের কয়েকটি নার্সিংহোমেও কয়েক জন ভর্তি রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, অ্যামোনিয়াম সালফাইড গ্যাস ছড়িয়ে এমন ঘটেছে। তবে পরীক্ষা করার আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ কটূ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁরা বুঝতে পারেন, সেটি বিষাক্ত গ্যাস। তবে কোথা থেকে তা আসছে, তা বাসিন্দারা বুঝতে পারেননি। এলাকায় অক্সিজেন তৈরির বন্ধ কারখানা রয়েছে। প্রথমে এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, সেখানে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই কারখানায় কিছু ঘটেনি। ঘণ্টা দুয়েক খোঁজাখুঁজি পরে গ্যাস কোথা থেকে বেরোচ্ছে তা বুঝতে পারেন বাসিন্দারা। এলাকায় জি টি রোডের গায়ে পাঁচিল ঘেরা একটি গ্যারাজ রয়েছে। গ্যাসের তীব্র গন্ধ আসছিল তার ভিতর থেকেই। গ্যারাজে কোনও লোকজন ছিল না। গেট খোলা ছিল। বাসিন্দারা পুলিশ ও দমকলকে খবর দেন।

দমকলের রানিগঞ্জ থেকে একটি ও আসানসোলের দু’টি ইঞ্জিন কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আসেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরাও। গ্যারাজের আশপাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গ্যারাজের কোথা থেকে গ্যাস বেরোচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলেন না দমকল ও পুলিশের কর্মীরা। এলোপাথাড়ি জল ছিটোতে শুরু করে দমকল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় দমকলের চার জন কর্মী বাইরে বেরিয়ে আসেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে গ্যাসের তীব্রতা খানিকটা কমলে ফের খোঁজাখুঁজি শুরু করে দমকল। একটি ঝোপ থেকে বড় একটি সিলিন্ডার মেলে। সেখান থেকেই গ্যাস ছড়াচ্ছিল বলে দমকল ও পুলিশ জানায়। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ সেটি তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে এলাকায় কটূ গন্ধের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

স্থানীয় বাসিন্দা অনিল ঝা বলেন, “দুপুরে হঠাত্‌ প্রচণ্ড চোখ জ্বালা শুরু হয়েছিল। আমরা সবাই খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।” সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মুখে রুমাল চাপা দিয়ে ওই গ্যারাজের গেটের সামনে ভিড় করেছেন এলাকার কয়েক জন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই গ্যারাজে ছাঁট লোহা এনে জমা করা হয়। তার পরে তা পাচার হয়। তাঁদের অনুমান, গ্যাসের সিলিন্ডারটি হয় লোহা কাটার জন্য অথবা ছাঁট লোহা হিসেবেই এখানে আনা হয়েছিল।

গ্যাস ছড়ানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিত্‌ ঘোষ। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাজ ছিল, এলাকার অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করা এবং গ্যাসের উত্‌সস্থল খুঁজে বের করা। এই জায়গাটি কার, কেন এই সিলিন্ডার আনা হয়েছিল, এখানে কী কাজ হয়, সে সব জানার জন্য আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মহকুমাশাসক অমিতাভবাবুর বক্তব্য, “এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তিনি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেবেন। ওই গ্যারাজ মালিকের এই গ্যাস নিয়ে কাজ করার অনুমতি ছিল কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

asansol garrage gas leak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE