দু’বছর পেরিয়ে গেলেও আসানসোল সিবিআই আদালতের পরিকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। এই অবস্থায় পরিকাঠামোর উন্নতি না হলে এই আদালতে মামলার কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আইনজীবীদের মত। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানান আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস।
আসানসোলে সিবিআই আদালত শুরু হয় ২০১২ সালে। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মলয় ঘটক রাজ্যের আইনমন্ত্রী থাকাকালীন শুরু হয় এই আদালত। আসানসোল আদালতের নতুন ভবনের পাঁচ তলার একটি ঘরে শুরু হয় এই আদালত। বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার যে সব সরকারি সংস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, মূলত সেই সব মামলারই শুনানি ও বিচার হওয়ার কথা এই আদালতে। আইনজীবী আশিসবাবু জানান, প্রতি মাসে গড়ে ১৫০টি মামলা এই আদালতে ওঠে। এখনও পর্যন্ত ১২০টির চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ৫০টির শুনানি চলছে। রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে ৬টি মামলা।
কিন্তু দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখানে পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ। আদালতের সরকারি আইনজীবী আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিচারের কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর মতো পরিবেশই নেই এখানে।” আদালত চত্বর ঘুরে দেখা গিয়েছে, শুধু বিচারক অজয় দাসের জন্য রয়েছে একটি মাত্র বৈদ্যুতিন পাখা। আর কোথাও পাখা নেই। আইনজীবীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার নেই। অধিকাংশ আইনজীবীকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাদী বা বিবাদী পক্ষের লোকজনেরাও এজলাস কক্ষে ঠিক মতো দাঁড়ানোর জায়গা পান না। মেঝেতে ধুলো-ময়লার পুরু আস্তরণ পড়েছে।
সরকারি আইনজীবী আশিসবাবু জানান, এই আদালতের জন্য কোনও সাফাইকর্মী পর্যন্ত রাখা হয়নি। বাধ্য হয়ে নোংরা পরিবেশে আইনজীবীদের মামলার কাজ করতে হচ্ছে। তিনি দেখান, এজলাসটি আদালত ভবনের পাঁচ তলায় হওয়ায় কক্ষের ছাদটির উচ্চতা খুবই কম। ফলে গরমে ঘরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। বেশিক্ষণ মামলার কাজ চললে অস্বস্তি হয় বলে তাঁর দাবি। আইনজীবীরা অনেক সময়ে বিচারককে মাঝ পথে মামলার কাজ বন্ধ রাখার আবেদনও জানান।
গুরুত্বপূর্ণ এই আদালতের পরিকাঠামো উন্নত করার দাবি তুলেছেন বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই। আসানসোল বার অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক বাণী মণ্ডলের অভিযোগ, “শুধু সিবিআই এজলাস নয়, সব এজলাসগুলিরই একই অবস্থা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বারবার আমরা লিখিত ভাবে জানালেও কেউ কর্ণপাত করেননি।” বাণীবাবু অভিযোগ করেন, লিফ্ট থাকলেও চলে না। তাই পাঁচ তলায় সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করতে হয় আইনজীবী-সহ সকলকেই। বয়স্ক মানুষজন খুব মুশকিলে পড়েন। লোডশেডিং হয়ে গেলে জেনারেটর চলে না। পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। মহিলাদের জন্য শৌচাগারও নেই। বহু বার বলা হলেও আদালত চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি। বাণীবাবুর বক্তব্য, “আমরা এই সব দাবিপূরণের জন্য মাঝে-মাঝে কর্মবিরতিও করি। আশ্বাস দেওয়া হলে তা আবার তুলে নিই। কিন্তু তার পরে আর কোনও কাজ হয় না।”
সিবিআই আদালতের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভবাবু বলেন, “আমিও এই অভিযোগ পেয়েছি। এখানকার উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাব এসেছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যতো শীঘ্র সম্ভব সমাধান করা হবে।”