Advertisement
E-Paper

ঘোড়ার পিঠে দুর্গা, অকাল বোধনে মেতেছে আমূল

ভরা শীতে দুর্গাপুজো। শরৎকালে নয়, মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষের নবমী তিথিতে দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতেছেন কাটোয়ার আমূল গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামে এখন রীতিমত উৎসবের পরিবেশ। বসে গিয়েছে মেলা। মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো মাঘ মাসে কেন? জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় তিনশো বছর আগে আমূল গ্রামের এক মৎস্যজীবী গ্রামের একটি নিকাশি নালায় মাছ ধরছিলেন। সেই সময় তার জালে তিন টুকরো পাথর উঠে আসে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৮
চলছে পুজো। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে পুজো। —নিজস্ব চিত্র।

ভরা শীতে দুর্গাপুজো।

শরৎকালে নয়, মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষের নবমী তিথিতে দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতেছেন কাটোয়ার আমূল গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামে এখন রীতিমত উৎসবের পরিবেশ। বসে গিয়েছে মেলা।

মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো মাঘ মাসে কেন? জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় তিনশো বছর আগে আমূল গ্রামের এক মৎস্যজীবী গ্রামের একটি নিকাশি নালায় মাছ ধরছিলেন। সেই সময় তার জালে তিন টুকরো পাথর উঠে আসে। সেই পাথরগুলি তিনি স্থানীয় এক পুরোহিতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এর পর ওই পুরোহিত পাথরগুলি পুজোর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেন। একটি পাথর দুর্গা রূপে ও বাকি দুটি পাথর বাসুদেব ও শিব রূপে পুজো করা হয়। এর পর কয়েক বছর পর কাটোয়ার পাশে অবস্থিত পাটুলি-নারায়ণপুরের জমিদার পালকি করে বর্ধমানে একটি মামলার জন্য যাচ্ছিলেন। সেই সময় আমূল গ্রামের বারোয়ারি তলায় দাঁড়িয়ে মামলা জিতলে পাথরগুলিকে পুজো করার মানত করেন ওই জমিদার। সেই সময় পাটুলি-নারায়ণপুর শেওড়াফুলি রাজার অন্তর্গত ছিল। মামলা জেতার পর নারায়ণপুরের জমিদার বিষয়টি শেওড়াফুলির রাজাকে জানান। কথিত আছে, যে দিন রাজা বিষয়টি জানতে পারেন সে দিনই তিনি দেবী দুর্গাকে স্বপ্নে দেখতে পান। এর পর রাজার নির্দেশে পাটুলি-নারায়ণপুরের জমিদার আমূল গ্রামে দুর্গাপুজো করার জন্য ২৫ বিঘা জমি দান করেন। স্বপ্নে দেখা মূর্তির সঙ্গে মিল রেখে আমূল গ্রামে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়। এখানে দেবীর বাহন হল ঘোড়া। তাঁর দশটি হাতের মধ্যে তিনটি হাত বড় ও বাকি সাতটি হাত ছোট।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী আশ্বিন মাসে এই গ্রামে দুর্গোৎসব হয় না। পুজো হয় মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে। দেবী দুর্গার মূর্তি প্রতি চার বছর অন্তর বিসর্জন করা হয়। এই পুজোর শুরুর সময় পারিবারিক থাকলেও বর্তমানে সর্বজনীন চেহারা নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “শীতকালীন দুর্গাপুজো আমাদের গ্রামের সব থেকে বড় উৎসব। এখনও রাজ পরিবার ও জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারীদের নামে এই পুজোর সময় সংকল্প করা হয়।” গ্রামের একটি ক্লাব এখন এই পুজো পরিচালনা করে। ওই ক্লাবের সম্পাদক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সেবাইতদের পক্ষে পুজো করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি মেনে ক্লাবের সদস্যরা পুজো পরিচালনা করে।

পুজো এক দিনের হলেও চার দিন ধরেই গ্রামে উৎসবের পরিবেশ থাকে। যাত্রা থেকে শুরু করে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। চার দিন ভিড় লেগে থাকে আত্মীয় পরিজনদেরও। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর সোদপুর থেকে এসেছেন কলেজ ছাত্রী সায়নী মুখোপাধ্যায় ও শেওড়াফুলি থেকে এসেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, “শুধুমাত্র মনের টানেই গত কয়েক বছর ধরে এখানে আসছি। এই সময়ে আমূল গ্রামে এলে অন্য রকম ভাল লাগা তৈরি হয়।”

soumen dutta katoa durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy