আর দেখা মিলবে না এই ছোট রেলের।—নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব রেলের একমাত্র ন্যারোগেজ লাইনের যাত্রা শেষ হতে চলেছে পয়লা ডিসেম্বর। ইতিমধ্যেই ওই লাইনটিকে ব্রডগেজ করার জন্য দরপত্র ডেকে পাঠিয়েছে রেল। বর্ধমান জেলা প্রশাসনও রেলকে নো অবজেকশন দিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ অক্টোবর পূর্ব রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশনস্ ম্যানেজার নিতিন বনশল জেলাশাসককে চিঠি (নম্বর: টি/পি/এনজি) দিয়ে জানান যে বলগোনা-কাটোয়া রেলপথের গেজ পরিবর্তনের জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হবে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি প্রসাদ বলেন, “শীঘ্রই ওই ন্যরোগেজ লাইন ব্রডগেজ হয়ে যাবে।”
রেল সূত্রে খবর, প্রকল্পটিকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। বলগনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ছোটলাইন রয়েছে ২৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে বলগনা থেকে বনকাপাশি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার লাইনের জন্য প্রথম পর্যায়ে খরচ ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। বনকাপাশি থেকে কাটোয়া পর্যন্ত বাকি ১২ কিলোমিটার লাইনে গেজ বদলের জন্য ৩৬ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে তৈরি করা হবে প্ল্যাটফর্ম, লেভেল ক্রশিং, সংযোগকারী রাস্তা, কালভার্ট, ফুট ওভারব্রিজ। এই পর্যায়ে মাটি ভরাটের কাজও করবে রেল। তবে দরপত্র ডাকা হলেও এখনই যে কাজ শুরু হচ্ছে না তা জানিয়েছেন পূর্ব রেলের এক কর্তা। তিনি বলেন, “সেপ্টেম্বরে দরপত্র খোলা হবে। তারপরে সেগুলি পরীক্ষা করে ঠিকাদার সংস্থা ঠিক করে কাজের বরাত দেওয়া হবে। ডিসেম্বরের আগে গেজ বদলের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।”
কাটোয়াতে প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রকে সামনে রেখে ২০০৬ সালে এই রেলপথ ব্রডগেজ করার প্রকল্পে সায় দিয়েছিলেন তত্কালীন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। প্রথমে কাটোয়ার তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র গড়ার কথা ছিল রাজ্য বিদ্যুত্ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল)। রেললাইনের জন্য প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুত্ নির্মাণকারী সংস্থা ও রেল ৫০ শতাংশ করে ব্যয়ভার বহন করবে বলে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন চুক্তিও হয়েছিল। পরে বর্ধমান থেকে বলগনা পর্যন্ত গেজ পরিবর্তনের কাজ শুরুও হয়। রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ওই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচলের সূচনাও করেন। তবে বর্ধমান থেকে বলগনা পর্যন্ত রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়ে গেলেও বলগনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত লাইনটি ন্যারোগেজ হিসেবেই থেকে যায়।
এর মধ্যে জমি জটে বারবার আটকে যাচ্ছিল কাটোয়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প। ২০১০ সালে, বিগত বাম আমলে সিদ্ধান্ত হয় রাজ্য বিদ্যুত্ উন্নয়ন নিগমের বদলে এই তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের কাজ করবে এনটিপিসি। এরপরেই ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনতে মাঠে নামে। তবে এর প্রায় বছর তিনেক পরে এনটিপিসি বুঝতে পারে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য বাকি জমি কেনা সম্ভব নয়। এরপরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। নিজেদের অবস্থান বদলে এনটিপিসিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তারা। সরকারের সাহায্য পাওয়ার পরে চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের ৩ মার্চ পূর্ব রেলের মুখ্য বাস্তুকারের (কনস্ট্রাকশন ২) হাতে দু’টি চেকে ১১২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা তুলে দেয় এনটিপিসি। তারপরেই কাটোয়া থেকে বলগনা পর্যন্ত গেজ বদলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে টাকা বরাদ্দ করে। এরপরেই দীর্ঘ সাত বছর ধরে আটকে থাকা প্রকল্পের জট খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
রেল দফতরের একাধিক কর্তা জানিয়েছেন, কাটোয়া-বলগনা রেললাইন এলাকায় মঙ্গলকোটের নিগন, কাটোয়ার শ্রীখণ্ড হল্ট স্টেশন, গাঙ্গুলিডাঙা ইত্যাদি গ্রামের কাছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রেলের জমি জবরদখল হয়ে পড়ে রয়েছে। সপ্তাহ দু’য়েক আগে পূর্ব রেলের মুখ্য বাস্তুকার (কনস্ট্রাকশন) কাটোয়া থেকে বলগনা ন্যারোগেজ রেলপথ পরিদর্শন করে যান। রেললাইন ঘুরে গিয়ে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেন তিনি। ওই রিপোর্ট দেখার পরেই রেল কর্তারা দ্রুত কাটোয়া-বলগনা রেলপথ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। রেলের কর্তাদের দাবি, কাজ শুরুর ১৮ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেল জানিয়েছে, জবরদখলকারীরা যদি কাজে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে সমস্যা মেটানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy