ডিভাইডারের ফাঁক গলে যাতায়াত। ফাগুপুর মোড়ে তোলা —নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে বর্ধমান ও গলসির তিনটি জায়গাকে ‘ব্ল্যাকস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করল জেলা পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত বছর বর্ধমানের ফাগুপুর মোড়, গলসির সারুল ও গলিগ্রাম মোড়ে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “গত বছর জুন মাসে তৎকালীন অতিরিক্ত ডিজি (ট্রাফিক) অরুণ গুপ্তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পদস্থ কর্তাদের একটি দল ওই তিনটি জায়গা পরদর্শন করে। দলে ছিলেন ন্যাশন্যাল হাইওয়ে অথরিটির অফিসারেরাও। পরে ওই আধিকারিকেরা বৈঠক করে জানান, দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ওই তিনটি জায়গার রাস্তায় নির্মাণগত নানা ত্রুটি থাকায় এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।” তাঁর দাবি, আমরা তখনই ত্রুটিগুলি সারাতে ন্যাশন্যাল হাইওয়ে অথরিটির কাছে সুপারিশ করেছিলাম। তবে এখনও কোনও উদ্যোগ করা হয়নি।
বর্ধমানের গ্রামীণ পুলিশ এলাকায় জামালপুরের বসিবপুর থেকে কাঁকসার মুচিপাড়া পর্যন্ত জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। তার মধ্যে কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ঘটে চলছে দুর্ঘটনা। পুলিশের দাবি, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার সচেতন করার পরেও নিয়ম না মেনেই রাস্তা পারাপার করেন বাসিন্দারা। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অব্যাহত। এ বার তাই দীর্ঘ জাতীয় সড়কের তিনটি দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের দাবি, গ্রামের রাস্তা থেকে সরাসরি ছোট গাড়ি, সাইকেল, মোটরবাইক বা ভ্যানো নিয়ে ওই তিনটি মোড়ে ওঠা যায়। তাতেই অহরহ তীব্র গতিতে চলা যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে।
বুধবার জেলা পুলিশের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে ওই তিন মোড়ের ডিভাইডারগুলিকে কিছুটা সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেমন, ফাগুপুর মোড়ের ডিভাইডারটিকে আরও ৩০০ মিটার সরাতে হবে। গলসির সারুল মোড়ের ডিভাইডারটিকে বর্ধমানের দিকে প্রায় ৪০০ মিটার সরাতে হবে। গলিগ্রামের কাছের ডিভাইডারটিকেও প্রায় ৪০০ মিটার সরাতে হবে। পুলিশের দাবি, ডিভাইডারগুলি সরলেই গ্রামের ভেতরের রাস্তা থেকে সরাসরি জাতীয় সড়কে ওঠা যাবে না। কিছুটা ঘুরে উঠতে হবে। ফলে দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যাবে। এসপির দাবি, এর পাশাপাশি গ্রামীণ রাস্তাগুলিতে কিছু রাম্বল ট্রিপ বসাতে বলেছি। তাতে জাতীয় সড়কে ওঠার আগে যানবাহনের গতি অনেকটাই শ্লথ হবে। তাঁর দাবি, রাতে ওই জায়গাগুলিতে আলোর ব্যবস্থা করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ অন্ধকার রাস্তায় বাঁকের মুখে জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়া গাড়িগুলি অনেক সময়েই পাশের রাস্তা থেকে কোনও গাড়ি বা ভ্যান রাস্তায় উঠছে কি না, তা ঠাহর করা সম্ভব নয়। আলো আর সিগন্যালের ব্যবস্থা হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।
গলসির সারুল মোড়ে আবার বেশ কিছু গ্যারাজ, দোকান, খাটাল রয়েছে। জনসমাগমও বেশি। গলিগ্রামেও বাজার, বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে এগুলি সরিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রশাসনের তরফে সবুজ সঙ্কেত মিললেই বাজার, খাটল সরাতে সচেষ্ট হবে তারা।
কিন্তু গত বছর জুনে পরিদর্শন, তারপরে চিঠি দিয়ে সুপারিশের পরেও এখনও ন্যাশনাল হাইওয়ে অথিরটির তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া কেন? সংস্থার দুর্গাপুর শাখার আধিকারিক কৃষ্ণ মেনন অবশ্য বলেন, “পুলিশ ঠিক কী সুপারিশ করেছিল তা আমার মনে নেই। তবে কেন তা মানা হয়নি সেটা খতিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy