Advertisement
E-Paper

নেতাদের দ্বন্দ্বে ছন্নছাড়া কল্পতরু উত্‌সব

শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের কোন্দলে প্রথম দিনেই যেন ভাঙা হাট ‘দুর্গাপুর সাংস্কৃতিক মেলা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া মাঠে শুরু হল এই মেলা। কিন্তু বহু স্টল ফাঁকা রয়ে গেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মলয় ঘটকের থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে তিনি আসেননি। মেলার উদ্বোধন করেন শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৮
উত্‌সবে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

উত্‌সবে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের কোন্দলে প্রথম দিনেই যেন ভাঙা হাট ‘দুর্গাপুর সাংস্কৃতিক মেলা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া মাঠে শুরু হল এই মেলা। কিন্তু বহু স্টল ফাঁকা রয়ে গেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মলয় ঘটকের থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে তিনি আসেননি। মেলার উদ্বোধন করেন শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়।

শহরের প্রবীণেরা জানান, আগে কল্পতরু উত্‌সব উপলক্ষে সাধুডাঙার কালিকানন্দ আশ্রমে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন ধরে রামকৃষ্ণ ও সারদার পুজো হতো। মেলাও বসত। কিন্তু মেলায় জনসমাগম বাড়তে থাকায় এক সময় তা সরে আসে স্টেশন রোডের ধারে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া ময়দানে। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মেলার চরিত্রে বদল হয়। কৃষিমেলা, শিল্পমেলা, বইমেলা থেকে শুরু করে গৃহস্থালীর সামগ্রী, খাবারের দোকান। প্রতি সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডিপিএলের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা এই মেলার নতুন নাম হয় ‘দুর্গাপুর সাংস্কৃতিক মেলা’। কল্পতরু নামটি একেবারে সরিয়ে ফেলা হয়। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে রাজ্যের অন্য মেলার মতোই এই মেলার দায়িত্বও সিপিএমের হাত থেকে কেড়ে নেয় তৃণমূল। ২০১২ সালে মেলা কমিটির সভাপতি হন ডিপিএলের আইএনটিটিইউসি-র একটি গোষ্ঠীর নেতা দেবদাস মজুমদার। মেলার নামে ফিরিয়ে আনা হয় ‘কল্পতরু’ শব্দটি।

দীর্ঘদিন ধরেই ডিপিএলে আইএনটিটিইউসি-র দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। সংগঠনের অন্য গোষ্ঠী ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য ও নিজের গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের সঙ্গে মাঝে-মাঝেই দেবদাসবাবুর অনুগামীদের বিরোধ বেধেছে। মারপিটে অনেকেই জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে অনেকেই জেল খেটেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে তিনি আইএনটিটিইউসি-র নাম ব্যবহার করছেন বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে ডিপিএলের অন্দরে। এমনকী, ২০১৩ সালে অবসরের পরে তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নিগ্রহের অভিযোগও ওঠে। সেই বছরই ডিসেম্বরে বিধাননগরে বেসরকারি হাসপাতালে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ ওঠার পরে সাংগঠনে সতর্কিত হন দেবদাসবাবু। গত দু’বছরের মতো এ বারও সাংস্কৃতিক মেলা পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন দেবদাসবাবু। এ বারও তিনি সামনে থেকে দায়িত্ব নিয়ে মেলা পরিচালনার কাজকর্ম শুরু করেছিলেন। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। অন্য গোষ্ঠীর লোকজন মেলা পরিচালনার দায়িত্ব পেতে নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার রাতে দেবদাসবাবুদের চারটি সাংগঠনিক কার্যালয় দখল নিয়ে নেন বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন। শেষ পর্যন্ত মেলার প্রথম দিন, বৃহস্পতিবার সকালে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন দেবদাসবাবু।

এ দিন সন্ধ্যায় দেবদাসবাবু বলেন, “শুধু মেলা কমিটি থেকে নয়, আমি শ্রমিক সংগঠন এবং দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে তা জানিয়ে দিয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে।” তাঁর দাবি, রাজনীতি করতে গিয়ে তাঁর পরিবার ও অনুগামীরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। আইএনটিটিইউসি-র অন্য গোষ্ঠী ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডলের দাবি, “এ তো হওয়ারই ছিল। গায়ের জোরে স্বার্থসিদ্ধি করছিলেন উনি। সবাই তা বুঝে গিয়েছেন।” তাঁর আরও দাবি, আইএনটিটিইউসি-র সব পক্ষ একজোট হয়ে সর্বসম্মত ভাবে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। দল থেকে দেবদাসবাবুর সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত আমার কাছে সরকারি ভাবে কেউ কিছু জানাননি।”

এমন টানাপড়েনের মাঝে প্রথম দিনের মেলা খানিকটা ছন্নছাড়া লেগেছে বলে জানান মেলায় আসা মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, মেলায় সাড়ে পাঁচশো স্টল রয়েছে। কিন্তু বহু স্টলই ফাঁকা। অনেক স্টল এখনও পুরোপুরি তৈরিই হয়নি। মেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইএনটিটিইউসি কর্মীরা অবশ্য দাবি করেন, প্রতি বছরই প্রথম দু’তিন দিন বহু স্টল ফাঁকা থাকে। পরে ভরে যায়। এমনই এক কর্মী আলোময় ঘরুইয়ের কথায়, “অনেক ব্যবসায়ী আসেন শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা থেকে। তাঁরা দু’এক দিন পরে যোগ দেন। এ বারও দিন দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যাবে।”

durgapur kalpataru utsav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy