Advertisement
E-Paper

নাবিধসাতেই খেত উজাড় ভাতারের আলুচাষির

অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক আলুচাষির। তাঁর নাম গুড্ডু মুর্মু (৫০)। বাড়ি ভাতার থানার ছাতিমডাঙা গ্রামে। ওই চাষির পরিবারের দাবি, ফলন ভাল না হওয়ায় সোমবার বিকেলে খেত থেকে ফিরে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন ওই চাষি। বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যা নাগাদ চিকিত্‌সকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও ভাতার থানার পুলিশের দাবি, পারিবারিক গোলমালের কারণেই আত্মঘাতী হন ওই চাষি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:৩১
লাইন দিয়ে আলু চলেছে হিমঘরে। কাটোয়ায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

লাইন দিয়ে আলু চলেছে হিমঘরে। কাটোয়ায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক আলুচাষির। তাঁর নাম গুড্ডু মুর্মু (৫০)। বাড়ি ভাতার থানার ছাতিমডাঙা গ্রামে। ওই চাষির পরিবারের দাবি, ফলন ভাল না হওয়ায় সোমবার বিকেলে খেত থেকে ফিরে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন ওই চাষি। বিকেলে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যা নাগাদ চিকিত্‌সকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও ভাতার থানার পুলিশের দাবি, পারিবারিক গোলমালের কারণেই আত্মঘাতী হন ওই চাষি।

যদিও জেলা জুড়ে আলু চাষের ছবিটা অনেকটাই আলাদা এ বার। আবহাওয়া ভাল থাকায় অতিরিক্ত ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্তারা। এমনকী প্রায় ৪০ শতাংশ আলু এখনও মাঠে পড়ে থাকা সত্ত্বেও হিমঘরে আলু রাখার জায়গা না পাওয়ারও আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, বস্তা পিছু দাম পড়তে শুরু করেছে। দিন কয়েকের মধ্যেই প্রায় ৪০ টাকা দাম কমে গিয়েছে। তবে কিছু জায়গায় নাবিধসার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল তা-ও মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গুড্ডুবাবুর ছেলে রাম মুর্মুর দাবি, “বাবা অন্যের কাছ থেকে নিয়ে মাত্র ৫-৬ বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। গত কাল বাড়ির সবাই মিলেই আলু তুলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া ধসা রোগের প্রকোপে আমাদের আলুর ফলন মার খেয়েছে।” তিনি জানান, মাঠে আলু তুলে হিসেব করে দেখা যায় যেখানে কাঠা পিছু পাঁচ বস্তা আলু ফলার কথা সেখানে মাত্র আড়াই থেকে তিন বস্তা আলু ফলেছে। এরপরেই বাড়ি ফিরে আসেন গুড্ডুবাবু। রামবাবুর দাবি, “আমরা মাঠে থাকাকালীনই বাবা বাড়ি চলে আসেন। তারপরেই ওই ঘটনা।” ধসা রোগে ফলন কমার কথা বলছেন ওই আলুচাষির পড়শিরাও। প্রতিবেশি বিজয় বিশ্বাস ও কমলা মাঝি বলেন, “আমাদের গ্রামের মাঠে ব্যাপক ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। তাই সব খেতেই আলুর ফলন মার খেয়েছে।”

রামবাবুর আরও অভিযোগ, “আলু চাষ করতে গিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনা করেছিল বাবা। টাকা শোধ করার জন্য মহাজন চাপও দিচ্ছিল। তার উপর এ বার অন্যত্র অতিরিক্ত ফলন আলুর দামও মিলছিল না। দেনা শোধ করতে না পারার আশঙ্কাতেই আত্মঘাতী হয়েছে বাবা।”

ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডল বলেন, “আমি মঙ্গলবার ওই আলুচাষির বাড়ি গিয়েছিলাম। ওঁর ছেলে তো বলছেন, চাষে ঋণ ছিল। তা শোধ করতে না পেরেই বাবা আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার তদন্ত করে আমরা একটি রিপোর্ট তৈরি করছি। ওই রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।” তবে সেই রিপোর্টে গুড্ডুবাবুর আত্মহত্যার কী কারণ দেখানো হয়েছে, তা বলতে চাননি বিডিও। তিনি বলেন, “রিপোর্টটি গোপন। তাই কাউকে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

তবে ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক বনমালি হাজরার দাবি, “ছাতিমডাঙা গ্রামের দিকে ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল বলে আমার জানা নেই। ওই গ্রামের এক আলুচাষি আত্মঘাতী হয়েছেন শুনেছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তবে ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে জানিনা।” কলকাতা থেকে ফিরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

আলুর সহায়ক মূল্যের ঘোষণা চেয়ে বিজেপির বিক্ষোভ। বর্ধমানে।

এ দিকে, জেলার বিভিন্ন জায়গায় আলুর দাম না পেয়ে, বিক্রি না হওয়ায়, হিমঘরে জায়গা না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন চাষিরা। রাস্তায় আলু ফেলেও বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ১৯৯৭ কিংবা ২০১১ সালের ক্ষতির কথাও মনে পড়ে যায় অনেক চাষির। ১৯৯৭ সালে যেমন ফলন ভাল হয়েছিল। পরে দাম পাবেন এই আশায় হিমঘরে প্রচুর আলু মজুতও করেছিলেন চাষিরা। ফলে হিমঘরে জায়গা না পেয়ে বহু আলু জমি, বাড়িতে পড়ে নষ্ট হয়। ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। ২০১১ সালেও আলুর দাম এতটাই কমে যায় যে হিমঘরের ভাড়া মিটিয়েও অনেক চাষি আলু ফেরত নেন নি। ফলে বাধ্য হয়ে আলু নিলাম করে বহু হিমঘর। জেলার অর্থনীতিও অনেকটাই ধাক্কা খায়। দেনায় ফেঁসে আত্মঘাতীও হন অনেক চাষি।

চাষিদের দাবি, এ বারও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। কিন্তু অন্য বারের মতো ব্যবসায়ীদের আলু কেনায় আগ্রহ নেই বলে তাঁদের দাবি। এর একটা কারণ, এ বার অন্য জেলা তো বটেই আশপাশের রাজ্যগুলিতেও আলুর ফলন ভাল হয়েছে। চাষিরা জানান, এ বার শুরুতে ১৯০ টাকা বস্তা পিছু দর থাকলেও তা ক্রমশ নামতে থাকে। সব থেকে কম দাম হয় মঙ্গলবার। এ দিন বস্তা পিছু আলুর দাম ছিল ১৫০ টাকা। তাতেও দেখা মেলে নি ব্যবসায়ীদের। ফলে দুপুর পর্যন্ত মাঠে আলু নিয়ে অপেক্ষা করলেও পরে অনেকেই তা হিমঘরে নিয়ে যান। কালনার আলু চাষি রণজিত্‌ সরকার জানান, হিমঘরে আলু পাঠাতে বস্তা পিছু খরচ হচ্ছে ৫৫ টাকা। পৌঁছেও লম্বা লাইন। তবুও পরে দাম পাওয়ার আশায় দেনা করেও আলু হিমঘরে রাখা হচ্ছে। এক ভাগ চাষি কাদের শেখের দাবি, বীজ, সার, কীটনাশক মিলিয়ে বিঘা প্রতি জমিতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। অথচ এক বিঘা জমির আলু দর এখন মেরেকেটে ১৫ হাজার টাকা। কিছু চাষির যাবি, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ধানের অভাবী বিক্রি। তাঁরা জানান, দু’মাস আগেও যে ধানের বস্তা বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকায়। এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৭০ টাকায়।

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কালনা শাখার সদস্য আনন্দ সাঁতরার দাবি, “এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সরকারি ভাবে চাষিদের আলু সহায়ক মূল্যে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।” কালনার নান্দাই এলাকার এক আলু ব্যবসায়ী ইদের আলি মোল্লার কথায়, “সরকারি ভাবে যাঁরা ভিন রাজ্যে আলু পাঠাবেন তাঁদের পরিবহণে সহায়তা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু এতে মুষ্টিমেয় কয়েকজনই সুবিধা পাবেন।” তাঁর দাবি, হিমঘরের ভাড়ায় ভর্তুকি মিললে চাষিদের কিছুটা সুরাহা হবে।

তবে মঙ্গলবারও আলু কেনা নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ দিতে পারেনি প্রশাসন। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, এ ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ মেলেনি। বুধবার হিমঘর মালিকদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন তিনি।

potato farmer guddu murmu suicide burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy