Advertisement
E-Paper

নির্দেশই সার, খুদেরা বাড়ি ফিরছে বই নিয়ে

খুদেদের কাঁধ থেকে কমাতে হবে বইয়ের ব্যাগের বোঝা। এই উদ্দেশ্যে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ ঠিক করেছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা স্কুলে আসবে-যাবে খালি হাতে। তাদের বইপত্র থাকবে স্কুলেই। বছর দেড়েক আগে এ ব্যাপারে নির্দেশিকাও দেওয়া হয় স্কুলগুলিতে। কিন্তু, স্কুল ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন ছবি।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:১১

খুদেদের কাঁধ থেকে কমাতে হবে বইয়ের ব্যাগের বোঝা। এই উদ্দেশ্যে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ ঠিক করেছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা স্কুলে আসবে-যাবে খালি হাতে। তাদের বইপত্র থাকবে স্কুলেই। বছর দেড়েক আগে এ ব্যাপারে নির্দেশিকাও দেওয়া হয় স্কুলগুলিতে। কিন্তু, স্কুল ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন ছবি। বেশির ভাগ স্কুলেই বইপত্র নিয়ে যাতায়াত করছে এই দুই শ্রেণির পড়ুয়ারা। কেন এখনও নির্দেশিকা কার্যকর করা গেল না, সে প্রশ্ন কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন জায়গার অভাবের কথা, কেউ কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন এত পড়ুয়ার বইপত্র সামলে রাখার সমস্যা। খুদে পড়ুয়াদের উপর থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর উদ্যোগ বহু দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে আগেই। এ রাজ্যেও বহু বেসরকারি স্কুলে এমন উদ্যোগের নজির রয়েছে। সরকারি স্তরে তা শুরু হয় বছর দুয়েক আগে। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ সিদ্ধান্ত নেয়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা বই রেখে যাবে স্কুলেই। তাদের সঙ্গে আবার বইয়ের যোগাযোগ হবে পর দিন স্কুলে পৌঁছে। ২০১৩ সালের শুরুতে এ ব্যাপারে রাজ্যের সব জেলায় নির্দেশিকা পৌঁছে যায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে।

বিভিন্ন স্কুল ঘুরে কিন্তু দেখা গিয়েছে, এখনও সেই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। কোথাও পরিকাঠামোর সমস্যা, কোথাও অভিভাবকদের চাপ। কোথাও আবার পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি বলে এই ব্যবস্থা করতে সমস্যায় স্কুল। দুর্গাপুরের বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রাথমিক বিভাগে শিক্ষকদেরই বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। বই রাখা হবে কোথায়? দু’টি শ্রেণি মিলিয়ে পড়ুয়া প্রায় তিনশো। এক শিক্ষক জানান, অত বই রাখার জায়গা নেই। কাঁকসার পানাগড় বাজার রেলপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পিন্টু নন্দী জানান, গত বছর নির্দেশ পেয়ে তা কার্যকরের উদ্যোগ হয়েছিল। কিন্তু বই স্কুলে রেখে গেলে বাড়িতে পড়ুয়াদের পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে না, অভিভাবকদের তরফে এমন অনুযোগের পরে আর র্কাযকর করা হয়নি। এ বছর নতুন করে নির্দেশ আসার পরে তা কার্যকর হলেও বই রাখার জায়গার বড় অভাব, জানান তিনি। কেতুগ্রামের ঘাটকুড়ি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভাগ্যধর দাস জানান, আপাতত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের বই স্কুলে রাখা চালু হলেও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের বই বাড়ি নিয়ে যেতে দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। গলসি ১ ব্লকের মুন্সেপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবুর্দ ধারা জানান, নির্দেশ মেনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের বই স্কুলেই রাখেন তাঁরা।

নানা বেসরকারি স্কুল অবশ্য এই ধরনের পদক্ষেপ আগেই করেছে। দুর্গাপুরের বেসরকারি হেমশিলা মডেল স্কুলে প্রথম তিন বছর বইয়ের বালাই নেই। যা শেখানো হয় হাতে-কলমে। স্কুলের অধ্যক্ষ সৌমেন চক্রবর্তী বলেন, “এই প্রয়াস নেওয়ার সময়ে শিক্ষক থেকে অভিভাবকঅনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। কিন্তু পরে পড়ুয়াদের উৎসাহ দেখে সবাই খুশি হয়েছেন।” সরকারি স্তরে প্রাথমিকের দুই শ্রেণিতে বই বাড়িতে না নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। সৌমেনবাবুর মতে, “বাড়িতে বই নিয়ে না গেলে খুদে পড়ুয়াটির উপরে চাপ অনেকটাই কমে যায়।” দুর্গাপুরের একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান তথা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সত্যজিৎ বসুর মতে, শিশুরা বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটাবে, খেলবে। বাড়িতে বই আনলেই বাবা-মা ছেলে-মেয়েকে পড়তে বসাবেন। সেটা মোটেও কাম্য নয়। তিনি বলেন, “এমন পদ্ধতি পড়ুয়া, অভিভাবক, শিক্ষক-সবার জন্য আদর্শ।”

বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বপনকুমার ঘোষ জানান, কেন এই নির্দেশ স্কুলগুলি পুরোপুরি কার্যকর করতে পারছে না, তা তিনি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নেবেন।

load of school bags burder of children arpita mazumder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy