Advertisement
E-Paper

নেশার টানে কিশোরেরা দুষ্কর্মে, উদ্বেগে কর্তারাও

‘তাড়াতাড়ি আয়, দেরি করলে আর মিলবে না’— সন্ধ্যে নামেই বছর চোদ্দর এক কিশোর ডাক পাড়ছিল জনা কয়েক শিশু-কিশোরকে। আসানসোল স্টেশন লাগোয়া অঞ্চলে বেশ কিছু শিশু-কিশোর তার চারপাশে জড়ো হয়। কিছুক্ষণ পরে ফিরতি পথে নজরে পড়ে, ওই শিশু-কিশোরেরা স্টেশন চত্বরেই পড়ে রয়েছে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
আসানসোল স্টেশন চত্বরে কিশোরদের জটলা। ছবি: শৈলেন সরকার।

আসানসোল স্টেশন চত্বরে কিশোরদের জটলা। ছবি: শৈলেন সরকার।

‘তাড়াতাড়ি আয়, দেরি করলে আর মিলবে না’— সন্ধ্যে নামেই বছর চোদ্দর এক কিশোর ডাক পাড়ছিল জনা কয়েক শিশু-কিশোরকে। আসানসোল স্টেশন লাগোয়া অঞ্চলে বেশ কিছু শিশু-কিশোর তার চারপাশে জড়ো হয়। কিছুক্ষণ পরে ফিরতি পথে নজরে পড়ে, ওই শিশু-কিশোরেরা স্টেশন চত্বরেই পড়ে রয়েছে।

নিত্যযাত্রীরা জানান, আসানসোল স্টেশন চত্বরে টিকিট কাউন্টারের কাছাকাছি প্রায়শই সন্ধ্যায় দেখা মেলে বছর চোদ্দর ওই কিশোরের। তার হাতে থাকে দাঁত মাজার পেস্টের মতো কয়েকটি হলুদ রঙের টিউব। আর তার চারপাশে জড়ো হওয়া কিশোরদের হাতে রয়েছে দলা পাকানো কাপড়ের টুকরো। বছর চোদ্দর ওই কিশোরটি টিউব থেকে কাপড়ের দলায় ঢেলে দিচ্ছে অর্ধ তরল কিছু। স্টেশনের দোকানদার, নিত্যযাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, ওই কাপড় নাকে নিয়ে খানিক গন্ধ শুঁকেই শিশু-কিশোরের দল অর্ধচেতন হয়ে ঢুলে পড়ছে।

যাত্রীদের অনুমান, ওই টিউবে রয়েছে ভাল মানের আঠা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, আসানসোল স্টেশন চত্বরে নেশা করার চল দীর্ঘদিনের। নিত্যযাত্রীদের সূত্রে জানা গেল, ওই পথশিশুরা ট্রেনে চেপে বা প্ল্যাটফর্মে সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে যেটুকু টাকা উপার্জন করে, সন্ধ্যা নামলেই তা দিয়েই চলছে নেশার উপকরণ কেনা। রাতের কোলফিল্ড বা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের কয়েক জন নিত্যযাত্রী আবার জানান, কখনও চলন্ত ট্রেনের কামরাতে বসেই আঠার গন্ধ শুঁকে নেশা করে ওই পথশিশুরা। আরপিএফ-এর তরফে কখনও দু’এক জনকে উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়া হয় ।

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, শুধু স্টেশন এলাকাই নয়, আঠা দিয়ে নেশা করার চল বাড়ছে বাসস্ট্যান্ড চত্বর, স্টেশনের পাশের ঝুপড়ি বা মুন্সি প্রেমচাঁদ রোডের আশেপাশেও।

এক পথশিশুকে জিজ্ঞস করে জানা গেল, ওই কিশোর ছাড়াও আঠা মেলে আসানসোল থেকে রেল স্টেশনে ঢোকার মুখে একাধিক পান-বিড়ির দোকানে। এলাকার এক দোকানদার জানান, দিনে অন্তত ২০টি আঠার টিউব বিক্রি হয়।

পুলিশের তরফে জানা গেল, নেশার টাকা জোগাড় করতে দিয়ে আসানসোলে চুরির ঘটনাও বাড়ছে। সম্প্রতি বার্নপুরের আট নম্বর বস্তি এলাকায় চুরির ঘটনায় ধৃত জনা চারেক কিশোরকে জিজ্ঞাসা করে বিষয়টি নজরে আসে পুলিশের। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে নেশা ঠেকাতে তেমন কিছুই করা যায় নি বলে মেনে নেন বর্ধমান জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন শিখা আচার্য। শিখাদেবী বলেন, “এখনও এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। তবে নেশা ঠেকাতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ কমিটির তরফে বিভিন্ন এলাকায় ঠিক কতজন পথশিশু এই ধরনের নেশা করছে, তার তথ্য জোগাড়ের কাজ চলছে বলে জানা গেল। শিখাদেবী আরও বলেন, “নেশায় আক্রান্ত পথশিশুদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলো ও চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করতে ডিসেম্বর মাস থেকেই বর্ধমানে একটি ওপেন শেল্টার গড়ে তোলা হবে।’’ কমিটির তরফে জানা গেল, শুধু আসানসোলই নয় নেশার চল বাড়ছে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়েই। আসানসোলের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিসার অভিজিত ঘোষ যদিও বলেন, “পুরো বিষয়টা আমরা জানি। তবে আমাদের কাছে কেউ আসেনি। ছ’বছর বয়সের মধ্যে কোনও শিশু আমাদের কাছে এলে আমরা তাকে আইসিডিএস কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করি।” আজ, শুক্রবার শিশু দিবসের প্রাক্কালে আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বিষয়টি সমাধান করতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নাগরিক সমাজকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

sushanta banik asansol drug intoxication asansol station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy