Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পার্বণে নাটক-যাত্রায় আটকে সংস্কৃতি চর্চা

লক্ষীপুজোয় যাত্রা। কালীপুজোয় নাটক। আর কালেভদ্রে কিছু ইন্ডোর গেমের আসর। ক্রীড়া-সংস্কৃতির চর্চা বলতে পাণ্ডবেশ্বরে শুধু এইটুকুই। সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এক সময়ে এই শিল্পাঞ্চলে খ্যাতি ছিল পাণ্ডবেশ্বরের। নাটক, সাহিত্য-আড্ডা থেকে নানাবিধ দেওয়াল পত্রিকা চল ছিল সব কিছুরই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ভাটা পড়েছে সে সবে।

পাণ্ডবেশ্বরে অ্যাথলেটিক ক্লাবে যাত্রা।—ফাইল চিত্র।

পাণ্ডবেশ্বরে অ্যাথলেটিক ক্লাবে যাত্রা।—ফাইল চিত্র।

নীলোত্‌পল রায়চৌধুরী
পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

লক্ষীপুজোয় যাত্রা। কালীপুজোয় নাটক। আর কালেভদ্রে কিছু ইন্ডোর গেমের আসর। ক্রীড়া-সংস্কৃতির চর্চা বলতে পাণ্ডবেশ্বরে শুধু এইটুকুই।

সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এক সময়ে এই শিল্পাঞ্চলে খ্যাতি ছিল পাণ্ডবেশ্বরের। নাটক, সাহিত্য-আড্ডা থেকে নানাবিধ দেওয়াল পত্রিকা চল ছিল সব কিছুরই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ভাটা পড়েছে সে সবে।

পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, বিশ্বজিত্‌ চট্টোপাধ্যায়, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহেন্দ্র গুপ্ত, স্বপনকুমার, নিরঞ্জন ঘোষ থেকে শান্তিগোপাল এই খনিশহরে অভিনয় করে গিয়েছেন অনেকেই। নানা অনুষ্ঠানে এসেছেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এক সময়ে ‘নির্ঝর’, ‘স্পন্দন’ ও ‘পল্লী সংবাদ’ নামে তিনটি দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হত বিধান স্মৃতি, অরবিন্দ সঙ্ঘ ও পল্লিমঙ্গল নামে তিনটি ক্লাবের উদ্যোগে। এলাকাবাসীর খেদ, বছর কুড়ি ধরে সে সব বন্ধ। এখন ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি, ১৫ অগস্ট বা দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো বিশেষ দিনগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল ‘রংমুখ’ নাট্যগোষ্ঠী। পাণ্ডবেশ্বরে তাদের নাটকচর্চা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ১৯৯৫ সালে। এই ক্লাবের নাট্যমঞ্চ, গ্রিনরুম সবই আছে। ক্লাবের প্রাক্তন সম্পাদক, বর্তমানে ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার শিবপুর কোলিয়ারির ম্যানেজার স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা পাণ্ডবেশ্বরে বিভিন্ন ক্লাবের মঞ্চে নাটক করেছেন। বহু বার বাইরেও গিয়েছেন। তখন সাফল্য পেলেও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে নাট্যচর্চা টিকিয়ে রাখতে পারেননি, মেনে নেন তিনি।

১৯৮০ সাল থেকে নিজেরাই যাত্রা করছে পাণ্ডবেশ্বর অ্যাথলেটিক ক্লাব। ক্লাবের সদস্য নিশীথ পাল জানান, তাঁরা বাইরে যাত্রা করতে যান না। শখে লক্ষ্মীপুজোর সময়ে ক্লাব প্রাঙ্গণে যাত্রা করেন। তফসিলি উন্নয়ন সমিতি এলাকায় নাটক করে। সমিতির সদস্য কীর্তন কোটাল জানান, কালীপুজোর সময়ে তাঁরা নিজেরাই নাটকে অভিনয় করেন। এ ছাড়া নানা সময়ে বাউল গান-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘সোনালি দুখ’, ‘কথামুখ’, ‘উদ্যোগ’-এর মতো কিছু লিটল ম্যাগাজিন এখনও নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

পাণ্ডবেশ্বরে পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ রয়েছে চারটি। এর মধ্যে ইসিএলের স্টেডিয়ামটিতে সংস্থার খেলোয়াড়েরা খেলাধুলো করেন। স্টেশনের পাশে রেল মাঠে পাঁচিল নেই। মাঠের মধ্যে দিয়ে মানুষজনের যাতায়াতের জন্য তা কার্যত রাস্তায় পরিণত হয়েছে। বাড়ির আর্বজনা প্রায়শই মাঠের ধারে ফেলে দিয়ে যান আশপাশের বাসিন্দাদের একাংশ। তার জেরে পুরো মাঠ ব্যবহার করা যায় না। রাজ্য সরকারের মাঠটিতে এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলাধুলো করে। খেলাধুলোর জন্য এ ছাড়া রয়েছে আর একটি মাঠ, যা মেটাল মাঠ নামে পরিচিত। পাণ্ডবেশ্বর অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রবীণ সদস্য, এক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে খেলা ফুটবলার অভিজিত্‌ ঘোষ জানান, মেটাল মাঠের কোনও কোনও অংশে প্রায়ই ফাটল ধরে যায়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সাহায্য মিললে এলাকার খেলোয়াড়েরা উপকৃত হবেন।

অভিজিত্‌বাবু বলেন, “এক সময়ে পাণ্ডবেশ্বরের উত্তম লাহা, কাজী ফিরোজ, হরিপদ বাদ্যকর, শ্যামল দাস, প্রদীপ ঘোষ, সিরাজ ঘোষেরা কোল ইন্ডিয়ার হয়ে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে বড় দলের সঙ্গে খেলেছেন। সেই গর্বের দিন এখন শুধুই স্মৃতি।” এখন নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলে পাণ্ডবেশ্বর অ্যাথলেটিক, ফ্রেন্ডস ক্লাব, নবীন সঙ্ঘ ও কলেজ পাড়ায়। এ ছাড়া বসে ক্যারাম-সহ নানা প্রতিযোগিতা।

ফ্রেন্ডস ক্লাবের সুদয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, “কোলিয়ারিতে খেলোয়াড়দের চাকরি পাওয়া কমে যাওয়ার জন্যই বোধহয় এখন এমন ভাটার টান।” এলাকার সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় আবার মনে করেন, “নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ক্লাবগুলি অন্য নানা কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত হয়ে পড়ায় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে বলে মনে হয়।”

আঁধার কাটিয়ে আবার কবে সেই সুদিন ফিরবে, তাকিয়ে রয়েছে পাণ্ডবেশ্বর।

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-পাণ্ডবেশ্বর’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর,

আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE