মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের পথে তৃণমূলের নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় বাড়ছে সমাজবিরোধী কাজকর্ম, দুষ্কৃতীদের আনাগোনা অথচ পুলিশ নিস্ক্রিয় এমনই অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। সোমবার কালনার মহকুমাশাসক ও এসডিপিও-র কার্যালয়ে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। শাসকদলের এমন পদক্ষেপে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক মহলেও।
সোমবার ১১টা নাগাদ পূর্বস্থলী থেকে তিনটি গাড়িতে ১৮ সদস্যের একটি দল কালনা রওনা দেয়। দলে ছিলেন পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা ঘোষ, সহ-সভাপতি হুসনেয়ারা খানুম, ভূমি এবং ভূমি সংস্কার কর্মাধক্ষ্য সুতপা সেন, পূর্ত কর্মাধক্ষ্য মদন পাল, মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রবি মাঝি, পিলা পঞ্চায়েতের প্রধান সুকন্যা বিশ্বাস, মাজিদা পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্না বিবি শেখ, ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জিত সান্যাল, পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ গাঙ্গুলি-সহ বেশ কয়েক জন। শাসকদলের নেতাদের অভিযোগ, এলাকায় সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও দুষ্কৃতীদের রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ওই নেতাদের দাবি, নদিয়া থেকে নদী পেরিয়ে এ পারে ঢুকছে দুষ্কৃতীদের একটি দল। চুপি, কাষ্ঠশালী, রাজারচর এলাকায় সমাজবিরোধীদের অত্যাচার চরম বলেও তাঁদের দাবি। অথচ পূর্বস্থলী থানার পুলিশ ওই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে তো করছেই না, উল্টে মৃত এক দুষ্কৃতীর স্ত্রীকে পাহারা দিচ্ছে বলেও ওই নেতাদের অভিযোগ। ১২টা নাগাদ দলটি পৌঁছয় এসডিপিও-র কার্যালয়ে। পঙ্কজবাবুর হাতে একটি ফাইলে দুটি অভিযোগপত্র ছিল। একটিতে স্বাক্ষর করেন প্রধান সহ তৃণমূলের সদস্যেরা, অন্যটিতে স্বাক্ষর করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ বাকি সদস্যেরা। ঘণ্টাখানেক ধরে আলোচনা হয় সেখানে।
বৈঠকে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যেরা জানান, দুষ্কৃতীদের দাপটে সাধারন মানুষ ভীত। তাঁদেরও অভিযোগ, বারবার পুলিশকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের পেছনে দলীয় এক নেতার মদত রয়েছে বলেও অনেকে দাবি করেন। বৈঠক শেষে মদনবাবু বলেন, “এলাকায় একটি পাখিরালয় রয়েছে। শীতের মরশুমে প্রচুর পর্যটক সেখানে আসেন। এসডিপিওকে আমরা বলেছি, এভাবে চললে এলাকায় সাধারন মানুষের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাবে।” পুলিশ সক্রিয় না হলে এলাকায় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কেউ কাজ করবেন না বলেও দাবি করেন তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতির কথায়, “এলাকায় গিজগিজ করছে সমাজবিরোধী। অথচ পুলিশের সহযোগিতা চাইলে উল্টোটা মিলছে। আর ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।” আর এক পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ, “এসডিপিও বিষয়টি নিয়ে আইসির সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু দলে থেকে দলের ক্ষতি চাইছে এমন কেউ সেখানে থাকলে আমরা আলোচনায় নেই।”
এ দিন অভিযোগ জানাতে আসে প্রতিনিধিদের অধিকাংশই তৃণমূল নেতা তপন চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে এলাকায় পরিচিত। গত কয়েক মাস ধরেই আর এক নেতা বিপুল দাসের সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। তপনবাবুর অনুগামীরা মাস দুয়েক আগে পূর্বস্থলী থানায় বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। সেখানেও তাঁদের অভিযোগ ছিল, এক দুষ্কৃতীকে ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও এক নেতার কথায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
তবে এ দিন দলটি যতক্ষণে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছয় ততক্ষণে একটি রাস্তার উদ্বোধন করতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ। ফলে অভিযোগপত্রটি জমা নেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তারাশঙ্কর ঘোষ। তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। ঘটনাটি নিয়ে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টপাধ্যায় বলেন, “ওদের কাছে সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত অভিযোগ জানাচ্ছে। তাতেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চান নি জেলা পরিষদের সদস্য বিপুলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy