এই মন্দির থেকেই চুরি গিয়েছে গিয়েছে গয়না।—নিজস্ব চিত্র।
ফের মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি গেল গয়না-সহ নানা জিনিসপত্র। বুধবার রাতে মন্তেশ্বরের হাটপাড়ায় সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে দেবীর সোনা-রুপোর গয়না ও কষ্টিপাথরের শালগ্রাম শিলা চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। গত পনেরো দিনে এ নিয়ে এই ব্লকে দশটি মন্দিরে হানা দিল দুষ্কৃতীরা। প্রায় কোনও ঘটনারই কিনারা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
মন্তেশ্বর থানা থেকে আধ কিলোমিটার গেলেই হাটপাড়া এলাকা। সেখানেই চক্রবর্তী পরিবারের সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। একতলা মন্দিরে রয়েছে দেবী সিদ্ধেশ্বরীর মূর্তি ও কয়েকটি শালগ্রাম শিলা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারের পূর্বপুরুষ বনোয়ারিলাল চক্রবর্তী প্রায় দেড়শো বছর আগে টিনের চাল দেওয়া মাটির মন্দির তৈরি করে সিদ্ধেশ্বরী পুজো শুরু করেন। পরে মন্দির পাকা হয়।
মন্দিরের আশপাশে এখন ঘন জনবসতি। মন্দিরে তিনটি সিঁড়ির ধাপ ওঠার পরে রয়েছে একটি গ্রিলের দরজা। তার পরে কাঠের দরজা। বাসিন্দারা জানান, সাধারণত গ্রিলের দরজা খোলা থাকে। কাঠের দরজায় তালা লাগানো থাকে। মন্দিরে সকাল ও সন্ধ্যায় পুজো হয়। চক্রবর্তী বাড়ির সদস্যেরাই পুজো করেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সেবাইত সোমনাথ চক্রবর্তী পুজো সেরে কাঠের দরজায় তালা ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়ির বধূ আলপনা চক্রবর্তী প্রতি দিনের মতো এ দিন সকালেও মন্দির পরিষ্কার করতে আসেন।
আলপনাদেবী জানান, এ দিন মন্দিরে গিয়ে দেখেন, দরজার তালা ভাঙা। ভিতরে সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। তিনি লোকজন ডাকেন। চক্রবর্তী পরিবারের অভিযোগ, দেবীমূর্তি থেকে সোনা ও রুপোর নানা গয়না, শিবের ত্রিশূল, শিবের মাথার সোনার সাপ চুরি গিয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব গয়না নানা সময়ে ভক্তেরা মন্দিরে দান করেছিলেন। সেগুলি ছাড়াও মন্দিরে রাখা আটটি শালগ্রাম শিলার সব চেয়ে পুরনোটি চোরেরা নিয়ে গিয়েছে।
ফের তালা ভেঙে মন্দিরে চুরি হল বর্ধমান জেলায়। বুধবার রাতে মন্তেশ্বরের সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে দেবীর গয়না
ও একটি কষ্টিপাথরের শালগ্রাম শিলা চুরি যায়। গত দেড় বছর ধরেই এই জেলায় একের পর এক মন্দিরে চুরি হচ্ছে।
কেতুগ্রামের নিরোলে গুপ্ত পরিবারের মন্দির, অট্টহাসের আশ্রম, জামালপুরে এক রাতে আটটি মন্দিরে চুরি-সহ
বহু ঘটনারই এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত এক মাসে শুধু মন্তেশ্বরেই দশটি মন্দিরে চুরি হয়েছে।
পুলিশের দাবি, কোন চক্র এই সবের সঙ্গে যুক্ত, তার খোঁজ চলছে। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।
গত বছর দেড়েক ধরে জেলার গ্রামীণ এলাকায় একের পর এক মন্দিরে চুরি হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্ধকারে পুলিশ। সম্প্রতি মন্তেশ্বরে কয়েকটি চুরির ঘটনার পরে সাধু সেজে গ্রামে আসা এক ব্যক্তিকে সন্দেহের বশে পুলিশের হাতে তুলে দেন পুড়শুড়ি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাকে জেরা করে বিশদ কোনও তথ্য মেলেনি বলে মহকুমা পুলিশের একটি সূত্রের খবর।
এ দিন মন্তেশ্বর হাটপাড়ায় চুরির খবর জানাজানি হওয়ার পরেই বহু মানুষ মন্দিরের সামনে জড়ো হন। পুলিশ পৌঁছয়। গ্রামবাসীদের দাবি, দেবতার সম্পত্তিতে কেউ চুরি করবে, এ কথা কখনও তাঁদের মাথায় আসেনি। তাই গ্রিলের দরজায় তালা দেওয়ার কথা মাথায় আসেনি কখনও। সকাল-বিকেল বহু মানুষ মন্দিরে প্রণাম করতে আসেন বলেও মন্দিরের দু’টি জানালা ও গ্রিলের দরজা খোলা রাখা হত। চক্রবর্তী পরিবারের প্রবীণ বাসিন্দা প্রফুল্ল চক্রবর্তী বলেন, “বহু বছর আগে এক বার এই মন্দিরে চুরি হয়েছিল। তার পরে কখনও এমন ঘটেনি।” গ্রামবাসীরা জানান, নিত্যপুজো ছাড়াও কালীপুজোর সময়ে এখানে ধুমধাম করে পুজো হয়। সেই সময়ে রাতে অন্নক্ষেত্রের আসর বসে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র গড়াই, অচিন্ত্য চক্রবর্তীদের অভিযোগ, “এই থানা এলাকায় বারবার এমন ঘটছে। অথচ পুলিশ কাউকে ধরতে পারছে না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই চুরি চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, মন্তেশ্বরে সম্প্রতি রাস্তায় একটি বড় ডাকাতি হয়। তার পরে পুলিশ ডাকাত দল ধরতে অভিযান চালাচ্ছিল। সেই সময় ক’দিন মন্দিরে চুরি বন্ধ ছিল। তার পরে ফের বুধবার রাতে চুরি হল। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আমরা খোঁজ চালাচ্ছি। গোটা ঘটনার তদন্তের ব্যাপারে মন্তেশ্বর থানার সঙ্গে কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy